বধির হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই লড়াই করে বাঁচতে হয়েছে তাঁকে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে হোঁচট খেয়েও একুশ বছরের মেয়েটি কী করে জিতলেন ‘মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ খেতাব? কেমন ছিল সেই সফর? শুনে নেওয়া যাক সত্যি হলেও সেই গল্প।
পথটা একেবারেই সহজ ছিল না ওঁর জন্য। ‘মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ খেতাব জেতা তো মুখের কথা নয়! আর সেটাই জিতে দেখিয়ে দিলেন উত্তরপ্রদেশের তরুণী বিদিশা বালিয়ান। নাচ এবং যোগ-ব্যায়াম সহ আরও অনেক ক্ষেত্রে পারদর্শী একুশ বছর বয়সী বিদিশা।
সম্প্রতি ‘মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছেন ভারতের বিদিশা বালিয়ান। তা নিয়েই তিনি এখন চর্চার তুঙ্গে। এই প্রথম কোনও তরুণী ভারত থেকে ‘মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ বিজয়ী হলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মোম্বেলা শহরে গত ২২ জুলাই ওই প্রতিযোগিতার ফিনালে ছিল।
২১ বছরের বিদিশা উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই তিনি কানে শুনতে পান না। কথাও বলতে পারেন না ঠিক ভাবে। বিদিশার এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তিনি কোনও দিন স্বপ্নের চেয়ে বড় করে দেখেননি।
ছোট বিদিশার স্বপ্নগুলো কিন্তু ছোট্ট ছিল না। স্বপ্ন দেখতেন এক দিন মিস ওয়ার্ল্ড হবেন। কিন্তু কী ভাবে সেই স্বপ্নকে সত্যি করা যায়? এ জন্য ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে চর্চা করতেন। আগ্রহ ছিল জানার।
তাঁর সব থেকে বড় সঙ্গী ছিল বই। সুন্দরী প্রতিযোগিতা বিষয়ক বিভিন্ন ম্যাগাজিন-বই বার বার পড়তেন। সময়, সুযোগ পেলেই দেখতেন টিভি।
ছোটবেলা থেকেই নাচ-গানের প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহ। মেয়ের উৎসাহ দেখে তাঁর বাবা বিদিশাকে টেনিসে ভর্তি করে দেন। এটা ছিল তাঁর স্বপ্নপূরণের প্রথম পদক্ষেপ। বিদিশাই প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের টেনিস প্রতিযোগিতায় (ডেফ অলিম্পিক) ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
প্রথমে বাবা-মায়ের সঙ্গে মুজফ্ফরনগরে থাকতেন বিদিশা। কিন্তু পরে কোমরে আঘাত পাওয়ায় মুজফ্ফরনগর, টেনিস— সব ছেড়ে সপরিবারে নয়ডায় চলে আসেন। সেইখানেই এশিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন।
এর পরে গুরুগ্রাম ও নয়ডায় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখান থেকেই জয়ী হয়ে ‘মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় যান। ২২ জুলাই মূল পর্বে আরও ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তুখোড় লড়াইয়ের পর ‘মিস ডেফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’-এর মুকুট জিতে নেন বিদিশা।
ইনস্টাগ্রামে ছবি শেয়ার করে বিদিশা জানিয়েছেন, তাঁর ‘তাণ্ডব নৃত্য’ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বিচারকেরা। বিদিশার তাল কিন্তু ‘বেতাল’ হয়নি। হিন্দু শাস্ত্রে ‘তাণ্ডব নৃত্য’কে শিবের তাণ্ডব লীলা বলে মনে করা হয়। ওই দিন বিদিশাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সকলে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ছবি শেয়ার করে বিদিশা সেখানে লিখেছেন, ‘এক দিন স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হল।’ মাথায় মুকুট তুলে দেওয়ার সময় দু’চোখ জলে ভরে উঠেছিল। লিখেছেন, ‘এই তো সবে শুরু। এখনও অনেক পথ চলতে হবে। সে জন্য আমি তৈরি।’ কবি রবার্ট ফ্রস্টকে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ’।
আন্তর্জাতিক স্তরে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০০১ সালে। প্রতিযোগিতার আয়োজক ‘মিস অ্যান্ড মিস্টার ডেফ ওয়ার্ল্ড’। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা। শুরুর বছরে প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল স্পেনের ম্যালোরকাতে। সে দিন জয়ীর মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ইউক্রেনের ভিক্টোরিয়া প্রাইটাইচেঙ্কো।