স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর পরীক্ষা ও নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর থেকেই তিনি ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ আছেন। এ বার সাসপেন্ড করা হচ্ছে এসএসসি-র প্রাক্তন সহ-সচিব অমিতেশ বিশ্বাসকে। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
অমিতেশবাবু অবশ্য বুধবার বলেন, “সাসপেন্ড হওয়ার খবর আমার জানা নেই।” তার পরেই চ্যালেঞ্জের সুরে তিনি বলে দেন, “কেউ আমাকে সাসপেন্ড করতে চাইলে ভুল করছেন।” এবং তিনি যে আপাতত ডব্লিউবিসিএস কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্র পড়াতে ব্যস্ত, তা-ও জানিয়ে দেন ওই আমলা।
২০১২-র এসএসসি-র পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে এপ্রিলের গোড়ায় বিতর্ক তৈরি করেছিলেন অমিতেশবাবু। গত ৭ এপ্রিল তাঁর সেই মন্তব্যের পরে এসএসসি থেকে ‘রিলিজ’ করা হয় অমিতেশবাবুকে। কিন্তু তার পরের দিনও তিনি যথারীতি সল্টলেকে কমিশনের দফতরে যান। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাঁকে সহ-সচিবের ঘরের চাবি দিতে অস্বীকার করেন কমিশনের কর্মীরা। তখন নকল চাবি তৈরি করিয়ে দরজা খুলে সহ-সচিবের অফিসঘরে ঢোকেন অমিতেশবাবু।
স্বরাষ্ট্র কর্মিবর্গ দফতর থেকে ওই আমলা স্কুল সার্ভিস কমিশনে যোগ দিয়েছিলেন। তাই কমিশন তাঁকে ‘রিলিজ’ দিতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক শুরু হয়। আবার তিনি চাবি তৈরি করিয়ে জোর করে কমিশনের দফতরে ঢোকায় বিক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান এসএসসি-কর্তৃপক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক প্রবণতা, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি, জমায়েত করে আক্রমণ করা-সহ পাঁচটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়। গত ১০ এপ্রিল তাঁকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠায় রাজ্য সরকারের কর্মিবর্গ দফতর। কিন্তু তার পরেও মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে তাঁদের মিছিলে হাঁটেন অমিতেশবাবু।
এই সব কিছুর জন্যই বিভাগীয় তদন্তের মুখে পড়েছেন ওই আমলা। বুধবার নবান্ন সূত্রে জানা যায়, মূলত তিনটি অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। l অনুমতি না-নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা। l প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটা। l কম্পালসারি ওয়েটিংয়ের নির্দেশ অমান্য করা।
কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে থাকলে স্বরাষ্ট্র কর্মিবর্গের দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা অফিসারদের। কিন্তু অমিতেশবাবু তা করেননি। যদিও এই সব অভিযোগ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি অমিতেশবাবু। বরং তাঁকে সাসপেন্ড করলে ভুলই করা হবে বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন।
অমিতেশবাবু ২০১২ সালের এসএসসি-র পরীক্ষায় অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ জানানোর পরে এসএসসি-র তরফে পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছিল, যে-পরীক্ষা নিয়ে তখনকার ওই সহ-সচিব বিতর্ক তৈরি করছেন, সেটির সঙ্গে তিনি নিজেও জড়িত ছিলেন। তিনি তো তখনই দুর্নীতির বিরোধিতা করতে পারতেন। করেননি কেন? তবে অমিতেশবাবুর দাবি, কমিশনের কর্তারা তাঁকে পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতেই দেননি।
আবার যে-সব আন্দোলনকারীর মিছিলে হেঁটে অমিতেশবাবু কর্মিবর্গ দফতরের বিভাগীয় তদন্তের মুখে পড়তে চলেছেন, তাঁরা মাওবাদীদের সঙ্গে জড়িত বলে তিনিই অভিযোগ তুলেছিলেন। এসএসি-র পরীক্ষা ও নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি মুখ খোলায় তাই প্রশ্ন ওঠে, অমিতেশবাবুর অবস্থান এ ভাবে সম্পূর্ণ ঘুরে গেল কেন? ওই আমলা অবশ্য জানান, তিনি সব সময় সত্যের সঙ্গে থাকেন। তাই আন্দোলনকারী কর্মপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
মেধা-তালিকায় নাম থাকা সব প্রার্থীর চাকরির দাবিতে বুধবারেও ধর্মতলায় বিক্ষোভ-অবস্থান করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে আসেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী-সহ বাম নেতারা। সূর্যবাবু বলেন, “বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনে বিষয়টি তোলা হবে। বাইরেও আন্দোলন চলবে।”
এসএসসি জানিয়েছে, নির্বাচন পর্ব মিটে গেলে আরও শ’তিনেক শিক্ষক-পদে নিয়োগের জন্য কাউন্সেলিং হবে। আন্দোলনকারীর সংখ্যা ২৬০০। কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য বলেন, “সকলকে চাকরি দেওয়া যে সম্ভব নয়, সেটা অনেক বারই বলা হয়েছে।”