তারাপীঠে সোনালি গুহ। শনিবার। ছবি: অনির্বাণ সেন
ঘটনার পরে তিন দিন পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু হামলাকারীদের গ্রেফতার তো দূর, পুলিশ এফআইআর দায়ের করে তদন্তই শুরু করেনি। তৃণমূল-নেতৃত্বও সোনালি গুহর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হাওড়ার চিকিৎসক নগেন্দ্র রাইয়ের পরিবার। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বাস চেয়েছেন।
শুধু সেই জন্যই অবশ্য চিঠি লেখা নয়। মমতাকে লেখা ওই চিঠিতে বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা তৃণমূল বিধায়ক সোনালি গুহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। পাশাপাশি, ওই রাতে সোনালি ঘটনাস্থলে পৌঁছে যে তাঁদের নানা ভাবে শাসিয়েছেন, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকেও পৃথক চিঠিতে তা জানিয়েছেন নগেন্দ্রবাবু।
গত বুধবার রাতে হাওড়ার ওই আবাসনে তিনতলার বাসিন্দা বেদপ্রকাশ তিওয়ারির সঙ্গে লিফ্ট নিয়ে গোলমাল হয় চারতলার বাসিন্দা নগেন্দ্রবাবুর পরিবারের। অভিযোগ, বেদপ্রকাশ দলবল নিয়ে এসে ওই চিকিৎসক এবং তাঁর ছেলেকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে ফোন করে সোনালিকে ডাকেন। ‘রাখি ভাই’-এর ডাকে রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ ও লোকজন নিয়ে আবাসনের নীচে হাজির হন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার। অভিযোগ, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে শাসান তিনি। বলেন, “আই অ্যাম দ্য ম্যান অব চিফ মিনিস্টার। আই অ্যাম দ্য গভর্নমেন্ট। ডোন্ট ফরগেট ইট।” বুধবার রাতের ওই ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন নগেন্দ্রবাবু।
ওই পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। শুক্রবার আদালতের কাছে তদন্তের অনুমতি চেয়ে দায় এড়িয়েছে তারা। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নগেন্দ্রবাবু শনিবার বলেন, “আমরা ভীষণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। যাঁদের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি, তাঁদেরই এক জন আমাদের গালিগালাজ করে নানা ভাবে শাসিয়েছে। পুলিশও তদন্ত এড়াতে ইচ্ছে করেই আদালতে গিয়েছে।”
ওই চিকিৎসকের পরিবার যে এখনও আতঙ্কে রয়েছে এবং এখনও তাঁদের শাসানো হচ্ছে, সে ব্যাপারে সোনালির কী বক্তব্য? এ দিন তিনি বলেন, “কই, আমি তো কিছু জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি।” একই দাবি উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষের। তিনি বলেন, “আমি ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।” এলাকার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি দিল্লিতে। তাই ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। সেই কারণেই কোনও মন্তব্যও করতে চান না তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে নগেন্দ্রবাবু বুধবার রাতের ঘটনা বিশদে জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে সপরিবার ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকেই। অথচ, সেই দলেরই এক নেত্রী বললেন, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে দেবেন। এ দিন নগেন্দ্রবাবু বলেন, “সোনালি আমাকে ভয় দেখান যে, স্বরাষ্ট্রসচিবকে বলে আমাদের সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলে দেবেন। তাই স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, কোনও নাগরিক কি নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে পারেন না?”
কেন্দ্রকে তোপ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়েরও
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
দিদির হাতিয়ার সারদা কাণ্ডের তদন্তে চক্রান্ত। ভাইয়ের হাতিয়ার নেতাজিকে প্রাপ্য সম্মান না দেওয়া। নিশানা দু’জনেরই এক। কেন্দ্রীয় সরকার। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে নিয়ে কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজিকে ‘রাষ্ট্রনেতা’ এবং তাঁর জন্মদিন ২৩ জানুয়ারিকে ‘জাতীয় ছুটি’র দিন হিসেবে ঘোষণার দাবিতে শনিবার শহিদ মিনারে জনসভা করে কার্তিকবাবুর পরিচালিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সভাকে অরাজনৈতিক বলা হলেও সেখানে তৃণমূলেরই সাংসদ, বিধায়ক, নেতারা ছিলেন এবং তাঁরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। কার্তিকবাবু বলেন, “বল্লভভাই পটেলের জন্য যা করা হচ্ছে, তাতে আমরা খুশি। কিন্তু আমরা চাই, নেতাজিকেও তাঁর প্রাপ্য সম্মান কেন্দ্রীয় সরকার দিক।”