জুরং পাখিরালয়ে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: এবিপি আনন্দের সৌজন্যে
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেশের বাইরে গেলে মন্ত্রিসভার কোনও বর্ষীয়ান সদস্যকে প্রশাসন পরিচালনার ভার দিয়ে যাবেন এমনটাই দস্তুর। কিন্তু রবিবার রাতে সিঙ্গাপুর পাড়ি দেওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাতায়কলমে কাউকে সেই দায়িত্ব দেননি। নবান্ন সূত্রে খবর, মৌখিক ভাবে দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখার কথা বলে গিয়েছেন তিনি। এই অবস্থায় রাজ্যে কোনও সঙ্কটজনক পরিস্থিতি দেখা দিলে কে হাল ধরবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। শাসক দলের নেতাদের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে ওটা কোনও সমস্যাই নয়। সিঙ্গাপুরে বসে রাজ্যের সব খবরই প্রতিনিয়ত রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাম আমলের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বিদেশে গেলে কৃষ্ণপদ ঘোষ, বিনয় চৌধুরী, শান্তি ঘটক বা মহম্মদ আমিনকে সরকার চালানোর ভার দিয়ে যেতেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময় সেই দায়িত্ব পেয়েছেন নিরুপম সেন। রীতিমতো ফাইল তৈরি করে রাজভবনের অনুমোদন নিয়ে, বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই ব্যবস্থা করা হতো।
বাম জমানার এক মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে হঠাৎ যদি রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার বড় ধরনের অবনতি হয়, অথবা কোনও কারণে মন্ত্রিসভার বৈঠক করতে হয় সে ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন সকলেই সরকারের শীর্ষমহল থেকে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত দাবি করে। তখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে কেউ না-থাকলে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সেই কারণেই নির্দিষ্ট এক জনকে দায়িত্ব দিয়ে দেশ ছাড়তেন মুখ্যমন্ত্রীরা।”
রাজ্যের এক অভিজ্ঞ আমলারও বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যে মন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব সামলাবেন, তিনি যাতে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সে জন্যই লিখিত ভাবে দায়িত্ব অর্পণের কথা জানানো হয় তাঁকে। জানানো হয় রাজ্যপালকেও। তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে দেশের বাইরে গিয়েছেন, রাজভবনকে জানানো তা প্রশাসনিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই তিনি দেশ ছাড়ার আগে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার, সেখানে রাজ্যপালের অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ থাকে।”
তবে রাজ্য প্রশাসনের একাধিক কর্তার মতে, এটা একটা প্রথা মাত্র। কোনও নিয়ম বা বাধ্যবাধকতা নয়। আর রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী বলছেন, আজকের ‘জেট-যুগে’ এ সব প্রথা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে চলেছে। আগে যোগাযোগের অব্যবস্থাই এই সব প্রথার জন্ম দিয়েছিল। এখন তা বস্তাপচা। সুতরাং বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রীরা বিদেশ যাওয়ার আগে অন্যের হাতে রাজ্য পরিচালনার ভার দিয়ে যেতেন বলে মমতাকেও তা মানতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। এই প্রক্রিয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা নেই মেনে নিয়েই প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে এই প্রক্রিয়া একটা চিরকালীন রীতি।”
নবান্ন সূত্রের খবর, মৌখিক ভাবে প্রশাসন দেখভালের দায়িত্ব পাওয়া এক মন্ত্রী দাবি করেছেন, বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে তাঁকে ওই নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। অন্য জনকে মুখ্যমন্ত্রী এসএমএস করে ‘দেখার’ কথা বলে গিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। দুই মন্ত্রীই সোমবার নবান্নে এসেছিলেন। ঘণ্টাখানেক থেকে চলে যান।