‘রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ফেরাতে চাই’

চলতি লোকসভা ভোটে রাজ্য কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কী? কোন লক্ষ্য সামনে রেখে লড়ছে কংগ্রেস? জনমত সমীক্ষা, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা খুনের অভিযোগ— নানা প্রশ্ন সামনে রেখে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মুখোমুখি আনন্দবাজারের প্রতিনিধি সঞ্জয় সিংহচলতি লোকসভা ভোটে রাজ্য কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কী? কোন লক্ষ্য সামনে রেখে লড়ছে কংগ্রেস? জনমত সমীক্ষা, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা খুনের অভিযোগ— নানা প্রশ্ন সামনে রেখে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মুখোমুখি আনন্দবাজারের প্রতিনিধি সঞ্জয় সিংহ

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ১৯:৪৫
Share:

প্রশ্ন: গত বার লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এ রাজ্যে ৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এ বার কী হবে?

Advertisement

উত্তর: ভাল হবে। দেখুন, এ বার আমরা তিনটি লক্ষ্য নিয়ে ভোট যুদ্ধে লড়ছি। এক, গত বার যে ৬টা আসনে জিতেছিলাম, তা ধরে রাখা। দুই, আমাদের আসন সংখ্যা বাড়ানো। তিন, আমাদের ভোট বাড়ানো।

Advertisement

প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ভোট বাড়বে?

উত্তর: বাড়বে। কেন বাড়বে তা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। ২০০৯ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে আমরা লোকসভা ভোটে লড়াই করেছিলাম। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটেও আমরা জোট করে লড়াই করেছি। ভোটের পর তৃণমূল-কংগ্রেসের যৌথ সরকার বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছিলাম। জোট ভাঙার পরে রাজনীতিতে বিরোধী হতে সময় লাগে। আমাদের ‘টেক অফ’ বিলম্বিত হলেও, আমরা রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা পুনরুদ্ধার করছি। তৃণমূলের সঙ্গে থাকায় কোণঠাসা অবস্থায় থাকতে থাকতে কংগ্রেসের কর্মীদের মধ্যে যে রাজনৈতিক নৈরাশ্য তৈরি হয়েছিল তা থেকে মুক্তি ঘটেছে। কংগ্রেস কর্মীরা নিজেদের পায়ে আবার দাঁড়াতে পারছেন। কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।

প্রশ্ন: তার মানে এ বারের লোকসভা ভোট থেকেই ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

উত্তর: (হেসে) বলতে পারেন। কিন্তু এখন আমাদের লক্ষ্য একটাই, রাজ্যে কংগ্রেসের আসন বাড়ানো। মনে রাখা দরকার, গত লোকসভা ভোটে কলকাতার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে পারেনি। এ বার কিন্তু আমরা রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছি। আশা করছি, এ বার কংগ্রেস ভাল ফল করবে। দেখবেন, উত্তরবঙ্গে তো আমরা আসন ধরে রাখবই, দক্ষিণেও আমরা আসন পেতে পারি। এর পরেও যে ব্যাপারটা আসছে তা হল, প্রথমেই আমি যে কথা বলছিলাম, রাজ্যে কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা ক্রমশ বাড়ছে। এটা ধরে রাখতে হবে। রাজ্যে বর্তমানে নৈরাজ্যের পরিবেশ চলছে। ভোট মিটলেই এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কংগ্রেস আন্দোলন করবে।

প্রশ্ন: এ বার ভোটের প্রচারেই তো আপনারা রাজ্যের তৃণমূল সরকারের নানা ব্যর্থতা তুলে প্রচার শুরু করেছেন। এই বিষয়গুলি নিয়েই কি আন্দোলন করবেন?

উত্তর: অবশ্যই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের বড়-ছোট সব নেতাই এক সুরে রব তুলেছেন, কেন্দ্রে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনা করছে। টাকাপয়সা দিচ্ছে না ইত্যাদি। আসলে ব্যর্থতা ঢাকতে ওঁরা যে অজুহাত খাড়া করছেন তা তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে আমরা রাজ্যের মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমরা বলছি, রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে, কিন্তু রাজ্য সরকার সেই টাকা খরচ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে বিআরজিএফ খাতে কেন্দ্র রাজ্যকে ৮,৭৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। রাজ্য পুরো টাকা খরচ করতে পেরেছে কি? চলে আসুন ১০০ দিনের কাজের কথায়। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম। কিন্তু প্রথম হওয়া দূরের কথা, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ২৪ নম্বরে। প্রথম স্থানে রয়েছে মিজোরাম। গ্রামের গরিব মানুষকে মিজোরাম সরকার ৮৮ দিন কাজ দিতে পেরেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের সরকার দিতে পেরেছে মাত্র ৩৫ দিন। কেন এমন হল? আসলে এখানকার সরকার ব্যর্থ। এ রকম অজস্র ব্যর্থতার উদাহরণ আছে। এমনকী, কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প রাজ্য সরকার নিজেদের বলে চালানোর যে চেষ্টা করছে তা-ও আমরা মানুষের কাছে তুলে ধরব।

প্রশ্ন: কংগ্রেস তো ইতিমধ্যেই খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালুর দাবিতে রাজ্যে আন্দোলন শুরু করেছিল। কিন্তু মাত্র চারটি জেলায় পদযাত্রা করেই সেই আন্দোলন থেমে গেল! আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থাকা দরকার নয় কি?

উত্তর: দরকার ঠিকই। কিন্তু আমরা তো বিষয়টি প্রচারে রেখেছি। ভোট মিটলেই আবার খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের দাবিতে জেলায় জেলায় আন্দোলন করা হবে। আমরা রাজ্যের জন্য নির্বাচনী ইস্তাহারে স্পষ্ট অভিযোগ তুলেছি, দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে এই আইন কার্যকর হলে কেন বাংলায় মা-মাটি-মানুষের সরকার তা চালু করছে না?

প্রশ্ন: কিন্তু কংগ্রেস যদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় না আসতে পারে তা হলে তার প্রভাব রাজ্যে আপনাদের দলের উপর পড়বে না? কারণ এ বার বিভিন্ন জনমত-সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসতে পারছে না। কী বলবেন?

উত্তর: ঠিকই, বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় খুব হইচই হচ্ছে। বলা হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতা আসছে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, লক্ষ্য করবেন সংবাদমাধ্যমে বিজেপি-র আসন সংখ্যা কমার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। আপনাদের মনে করিয়ে দিই, ২০০৪ সালেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, এনডিএ ক্ষমতায় আসছে। তখন বাজারে চলছে, ‘ইন্ডিয়া ইজ সাইনিং’, ‘ফিল গুড ফ্যাক্টর’-এর তত্ত্ব। কিন্তু ক্ষমতায় এল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। এ বারেও এনডিএ-কে ২০০৪-এর পুনরাবৃত্তির মুখোমুখি হতে হবে। ফলে, কংগ্রেসের উপর কোনও খারাপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সরকার যে মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে চলছে তা আজ দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানুষ এই ভাঁওতার প্রতিবাদে সরব হচ্ছে। এই প্রতিবাদ আগামী দিনে আরও জোরাল হবে। কংগ্রেস সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে।

প্রশ্ন: এনডিএ না হয় ক্ষমতায় আসতে পারল না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলছেন তাঁরা ফেডেরাল ফ্রন্ট করবেন এবং দিল্লিতে সরকার গড়ার নির্ণায়ক হবে তৃণমূল। কী বলবেন?

উত্তর: ফেডেরাল ফ্রন্ট না হয় হল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন নিশ্চয়তা কোথায়? আকাশে দুর্গ তৈরি করে লাভ নেই।

প্রশ্ন: প্রতি বার ভোটের আগে আপনার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। এ বারেও উঠেছে। ভোটের মুখে এই ধরনের অভিযোগের মোকাবিলা করবেন কী ভাবে?

উত্তর: আসলে উত্তরাধিকার সূত্রে সিপিএমের অনেক কিছুই রপ্ত করেছে তৃণমূলের সরকার। যার মধ্যে একটি হল, বিরোধী যে সমস্ত নেতার থেকে বিপদ হতে পারে তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দাও। হেনস্থা করো। যেমন, আসানসোলে বিজেপি-র গায়ক প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রশাসন অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে, তেমনই আমি যখন দলীয় প্রচারে কোচবিহারে ব্যস্ত, তখন আমাকে সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদের এক গ্রামে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত করল পুলিশ। আরে, অধীর চৌধুরী যদি খুনি হয় তবে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ তাকে ধরছে না কেন? ব্যাপারটা কী জানেন, এই ষড়যন্ত্র আমার বিরুদ্ধে নতুন নয়। এক দিন রাহুল গাঁধী আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার নামে এত খুনের মামলা হয় কেন?’ আমি বলেছিলাম, বাংলায় যে দলের সরকার আছে, তারা যদি আমাকে মিথ্যা মামলায় না ফাঁসায় আমার মনে হয়, আমি ভুল রাস্তায় চলেছি। শাসকরা মিথ্যা মামলা করেছে মানে আমি ঠিক রাস্তায় চলেছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement