নরেন্দ্র মোদীর ডাকে দিল্লিতে নীতি আয়োগের প্রথম বৈঠকেই অনুপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন আচরণে অবাক না হলেও রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও হতাশ রাজ্যের শিল্পমহল। বণিকমহলের মতে, এ ভাবে নিজেদের একঘরে করে রাখার জন্য চড়া দাম দিতে হবে রাজ্যকে। একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতি নিজেই ভাঙছেন মমতা।
রাজনীতি উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। শিল্পপতিদের সম্মেলন ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’-এর মঞ্চ থেকে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এক মাস আগেই বলেছিলেন, “রাজনৈতিক মতভেদ রাজ্যসভায় থাকতে পারে। কিন্তু শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নয়। এ সব মতভেদ উন্নয়নকে ধ্বংস করতে পারবে না।”
নীতি আয়োগের মতো মঞ্চে না গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নিজের কথার বিরোধিতা করছেন বলে বণিকমহলের অভিযোগ। বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্তের ক্ষোভ, অর্থের অভাবে রাজ্যে বহু প্রকল্প আটকে রয়েছে। অথচ তা নিয়ে সরব হওয়ার উপযুক্ত মঞ্চটাই ব্যবহার করল না রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, “রাজ্যের দুর্ভাগ্য যে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না শাসকদল। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যও সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে চাইছে। দলছুট শুধু পশ্চিমবঙ্গ।”
তবে জনসভা বা বণিকসভার মঞ্চ থেকে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বদা মুখর। একাধিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, এক লক্ষ কোটি টাকা ঋণের জন্য ২৮ হাজার কোটি টাকা সুদ হিসেবে কেন্দ্রকে দিয়ে দিতে হয়। শিল্পমহলের বক্তব্য, নীতি আয়োগের বৈঠকে ঋণ পুনর্গঠনের ছক তুলে ধরা যেত। জাতীয় স্তরের এক বণিকসভার কর্তার মন্তব্য, “নিজেরাই নিজেদের একঘরে করলে ক্রমশ গুরুত্ব হারাবে রাজ্য।” তিনি বলেন, “মুখভার করে এক কোণে বসে থাকলে কেউ ফিরে দেখবে না।”চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট অরুণ সরাফও মনে করেন, রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও বৈঠকে উপস্থিত থাকা জরুরি ছিল। তাঁর আশা, এ বার দর্শকের ভূমিকায় থাকলেও পরের বার হয়তো সক্রিয় হয়ে উঠবে রাজ্য সরকার।
তবে সার্বিক ভাবে, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক নিয়ে বেশ আশঙ্কায় রয়েছে শিল্পমহল। পণ্য পরিষেবা কর, কয়লা খনি বণ্টনের মতো বিষয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতা করেছে রাজ্য। নীতি আয়োগেও বিরোধিতার বার্তাই পাঠিয়েছে রাজ্য। তাদের দাবি, এ ধরনের সংঘাতপূর্ণ মনোভাবে আখেরে রাজ্যের বিনিয়োগই মার খাবে।