বিশ্ববঙ্গের সঙ্গেই শিল্প সম্মেলন চান মুখমন্ত্রী

নরেন্দ্র মোদীর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর ধাঁচে শিল্প সম্মেলন করতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নিজস্ব ঘরানায় শিল্পের সঙ্গে কলাকেও মেলাবেন তিনি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ঘোষণা মতোই শিল্প মানে শুধুই কলকারখানা নয়। গণ বিনোদনকেও শিল্প হিসেবে গণ্য করেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৭
Share:

নরেন্দ্র মোদীর ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর ধাঁচে শিল্প সম্মেলন করতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে নিজস্ব ঘরানায় শিল্পের সঙ্গে কলাকেও মেলাবেন তিনি। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর নিজের ঘোষণা মতোই শিল্প মানে শুধুই কলকারখানা নয়। গণ বিনোদনকেও শিল্প হিসেবে গণ্য করেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে সিঙ্গাপুরে যাওয়া শিল্পপতিদের বুধবার নবান্নে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে মমতা বলেছেন, আগামী ৭-৮ জানুয়ারি কলকাতায় বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনের যে আসর বসবে, সেখানে শিল্প এবং কলাকে পাশাপাশি তুলে ধরা হবে। দু’দিনের এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীদের যেমন আমন্ত্রণ জানানো হবে, তেমনই বসবে সংস্কৃতির আসর।

এক সরকারি কর্তা জানাচ্ছেন, বার্ষিক শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিডস’ এবং মূলত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন একসঙ্গে করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। সে জন্য বাছাই করা শিল্পপতিদের নিয়ে একটি কোর গ্রুপ তৈরি করতে চান তিনি। কোর গ্রুপের ভিতরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য আলাদা করে সাব-কমিটিও তৈরি হবে। সরকার এবং কোর গ্রুপের সদস্যরা মিলিত ভাবে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে শিল্প সম্মেলনের আয়োজন করবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ আছে বলে জানালেও তেমন মাপের শিল্প সম্মেলন আয়োজন করার ক্ষমতা এ রাজ্যের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন একাধিক সরকারি কর্তাই। প্রথমত, লগ্নির গন্তব্য হিসেবে এ রাজ্য গুজরাতের সঙ্গে কোনও তুলনাতেই আসে না। ফলে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর মঞ্চ যখন আলো করে থাকেন শিল্প জগতের নক্ষত্ররা, তখন এক দু’জন প্রথম সারির শিল্পপতিকে আনতেই হিমসিম খান রাজ্যের কর্তারা।

তৃণমূলের তিন বছরের জমানায় ‘বেঙ্গল লিডস’-এর আয়োজন হয়েছে দু’বার। এক বার কলকাতায়। এক বার হলদিয়ায়। কোনও বারেই মাঝারি মাপের চেয়ে বড় কোনও শিল্পপতি সেখানে পায়ের ধুলো দেননি। এমনকী, দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প সম্মেলনের ছবিও ছিল একই রকম। তার পর মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনে এসেছিলেন মুকেশ অম্বানী। কিন্তু সব মিলিয়ে রাজ্যের শিল্প চিত্রের বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি। যার জন্য জমির প্রশ্নে রাজ্য সরকারের অনড় অবস্থান এবং শাসক দলের দাদাগিরির সংস্কৃতিকেই বহুলাংশে দায়ী করে শিল্পমহল।

পর পর দু’বারের ব্যর্থতার পর গত বছর সরকার ‘বেঙ্গল লিডস’ আয়োজনই করেনি। যদিও হলদিয়া সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়েছিল, ২০১৩ সালের ‘বেঙ্গল লিডস’ হবে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে।

বড় মাপের শিল্প সম্মেলন করার ক্ষেত্রে সময়ের অভাবকেও বড় প্রতিবন্ধক বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর আসর বসে দু’বছর অন্তর। ২০১৫ সালের সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ। সিঙ্গাপুর এ বার এই সম্মেলনের পার্টনার কান্ট্রি। সেই জন্য সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন (এসবিএফ) সে দেশে রোড-শোয়েরও আয়োজন করেছে। কিন্তু বিশ্ববঙ্গ সম্মেলন আয়োজনের জন্য হাতে সময় মাত্র চার মাস!

বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে রাজ্যের জন্য লগ্নি আহ্বানের কাজ অবশ্য এর আগেও করেছে মমতা সরকার। লাস ভেগাসে সারদা গোষ্ঠীর স্পনসর করা যে সম্মেলন নিয়ে সম্প্রতি মাথাচাড়া দিয়েছে, সেখানে হাজির ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি অবশ্য সরকারি খরচেই লাস ভেগাস এবং লন্ডন গিয়েছিলেন।

কলকাতার বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে কী ভাবে শিল্প সম্মেলনকে জোড়া যায় তার পাশাপাশি রাজ্যের শিল্পচিত্র নিয়ে কুরুশ গ্রান্ট, গৌরব স্বরূপ, সঞ্জয় বুধিয়া, রূপালি বসুর মতো সিঙ্গাপুরে তাঁর সফরসঙ্গী শিল্পকর্তাদের সঙ্গে এ দিন আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সঞ্জীব গোয়েন্কা, হর্ষ নেওটিয়া, করণ পলের মতো অনেক শিল্পপতিই হাজির ছিলেন না সেই বৈঠকে। বৈঠকের পরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সিঙ্গাপুর সফর থেকে ভয়ঙ্কর ভাল সাড়া মিলেছে। দু’ঘণ্টা ধরে যে আলোচনা হল তাতে অনেক নতুন প্রস্তাব এসেছে।” তিনি জানান, ৫ সেপ্টেম্বর আবার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানে আরও খুঁটিনাটি আলোচনা করা হবে।

সরকারি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে শিল্পপতিরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ল্যান্ড ব্যাঙ্কের যে তথ্য রয়েছে তার কম্পিউটারাইজেশন করা দরকার। সেই সঙ্গে ল্যান্ড রেকর্ডসেরও কম্পিউটারাইজেশন প্রয়োজন। শিল্পপতিদের মতে, লগ্নিকারীরা প্রথমেই জমির তথ্য হাতে পেতে চান। যা এখন পাওয়া মুশকিল। ফলে ঠিক কী পরিমাণ জমি সরকারের হাতে রয়েছে, কোথায় রয়েছে সেই তথ্য অন-লাইনে থাকা জরুরি। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী ল্যান্ড রেকর্ডসের কম্পিউটারাইজেশনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তথ্যপ্রযুক্তি নিয়েও নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন শিল্পপতিরা। তাঁদের বক্তব্য, এখন আর সামগ্রিক ভাবে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ চাইলে হবে না। কোন বিশেষ ক্ষেত্র চিহ্নিত করে লগ্নি টানতে হবে। রাজ্য যাতে অ্যানিমেশন, গেমিং, হার্ডওয়্যার-এ বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করে সেই পরামর্শ দিয়েছেন শিল্পপতিরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement