পক্ষপাতের অভিযোগে পাঁচ পুলিশ সুপারকে সরিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই অপসারণের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, লোকসভা ভোট মিটলেই তিনি তাঁদের সসম্মানে ফিরিয়ে আনবেন। এ বার ‘অধিক সম্মান’ দেওয়ার জন্য তাঁদেরই মধ্যে দু’জনকে বেছে নিল রাজ্য সরকার। আজ, শুক্রবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ওই দুই পুলিশ অফিসার বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা ও পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে প্রশংসা-পদক পরিয়ে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
আজকের অনুষ্ঠানেই বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার পাচ্ছেন ‘সিএম’ পদক। যে-ঘটনা সাম্প্রতিক কালের রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে, সেই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের রাশ ছিল মূলত ওই পুলিশ অফিসারের হাতেই। প্রশাসনের একাংশ বলছেন, সেই কাজে ‘অসাধারণ দক্ষতা’র পুরস্কার হিসেবে রাজীব কুমারকে ওই পদক দিচ্ছে রাজ্য। যদিও বিরোধীরা ওই কমিশনারেটের বিরুদ্ধেই সারদা কেলেঙ্কারির গুরুত্বপূর্ণ নথি লোপাটের অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকার যে সে-সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছে, কার্যত তা বোঝাতেই রাজীব কুমারের নাম পদক-তালিকায় রাখা হয়েছে বলে ওই প্রশাসনিক কর্তাদের অভিমত। তাঁর সঙ্গে ওই একই পদক পাচ্ছেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্তও।
এ বছরই প্রথম এমন পদক দেওয়ার প্রথা চালু করল রাজ্য এবং তা শুধুই আইপিএস অফিসারদের জন্য। আর তা নিয়েই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে পুলিশমহলে। প্রশাসনেরও একাংশের বক্তব্য, কোনও রাজ্যে শুধু আইপিএস-দের জন্য পদক সংরক্ষণের নজির নেই। কারণ, বীরত্ব বা শৃঙ্খলা, যে-সব কাজের নিরিখে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হয়, তার মাপকাঠি কখনওই পদ বা মান হতে পারে না। নবান্নের ওই কর্তারা বলছেন, বাহিনীর সব কর্মীই পদকের দাবিদার। যিনি যোগ্যতা প্রমাণ করেন, তিনিই পুরস্কার পান। কিন্তু সেটাকে কখনওই নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা ঠিক নয়। এতে নিচু তলার পুলিশকর্মীদের মনোবল কমে যায়।
এত দিন স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে চার রকমের পদক দেওয়া হতো। সেগুলি হল শৌর্য, নিষ্ঠা, প্রশংসা ও সেবা পদক। শৌর্য পদকের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকা, দেওয়া হয় ১০ জনকে। নিষ্ঠা পদক পান ১৩ জন, অর্থমূল্য ২৫ হাজার টাকা। প্রশংসা পদকের অর্থমূল্য ১৫ হাজার টাকা, দেওয়া হয় ৭০ জনকে। সেবা পদকের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি, ১০০। তার অর্থমূল্য ১০ হাজার টাকা। তবে ‘সিএম’ পদকের সঙ্গে প্রাপকেরা কোনও আর্থিক পুরস্কার পাবেন না।
নবান্ন সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের দু’জন এবং রাজ্য পুলিশের চার জনকে ওই নতুন পদক দেওয়া হচ্ছে। কারা ওই পদক পাবেন, তা বাছাই করতে রাজ্যে পুলিশের ডিজি এবং কলকাতায় পুলিশ কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে দু’টি পৃথক কমিটি তৈরি করে দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতর। একটি কমিটির চেয়ারম্যান, কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ নিজেই ‘অসাধারণ’ পদক পাচ্ছেন। প্রশংসাসূচক পদকের জন্য বাছা হয়েছে ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে।
আইপিএস-দের সঙ্গে সঙ্গে পদক নেবেন চার আইএএস-ও। তাঁরা হলেন স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ, পঞ্চায়েতসচিব সৌরভ দাস এবং সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেন। নবান্নের এক কর্তা বলেন, “আইপিএস অফিসারদের ব্যক্তিগত কাজের নিরিখে পদক দেওয়া হলেও আইএএস-রা তা পাচ্ছেন নিজেদের দফতরের ভাল কাজের জন্য।”