সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যে ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, আজ, সোমবার থেকে তা তেমনই নেমে যাবে হঠাৎ করে। উত্তর ভারতের হিমশীতল বাতাস ঢুকে পড়বে পরিমণ্ডলে। ফলে কাল, মঙ্গলবার থেকেই শীত হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দিতে পারে বলে পূর্বাভাস দিল আলিপুর হাওয়া অফিস।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ এবং তার জেরে বাংলাদেশের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য থেকে শীতই উধাও হয়ে যেতে বসেছিল। শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। যা মার্চ মাসের আবহাওয়াকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ঘূর্ণাবর্ত দুর্বল হয়ে পড়ায় রবিবারই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করায় একটু একটু করে উত্তুরে হাওয়াও ঢুকতে শুরু করেছে। শীত যে মরে যায়নি, সেই কথাটাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল বছরের প্রথম রবিবার। আলিপুর হাওয়া অফিসও শীত ফিরে আসার কথাই বলছে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, শীতের দ্বিতীয় দফার ব্যাটিংয়ে অনেক চার-ছয়ের দেখা মিলবে।
ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কড়া শীত পড়তে শুরু করেছিল দক্ষিণবঙ্গে। ২৬-২৭ ডিসেম্বর দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছিল। কলকাতার তাপমাত্রাও নেমে গিয়েছিল ১২ ডিগ্রির নীচে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে ২৮ ডিসেম্বর থেকেই বাড়তে থাকে সর্বনিম্ন তাপমাত্র। গত সপ্তাহে গোটা রাজ্যের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই উপরে। মেঘে ঢাকা আকাশে দিনের বেলা কিছুটা শীত-শীত ভাব থাকলেও, রাতে কিন্তু লেপ-কম্বল গায়ে রাখতে কষ্ট হয়েছে। গোটা উত্তর ও মধ্য ভারতে যখন প্রবল শৈত্যপ্রবাহ চলছে, একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হানা দিচ্ছে কাশ্মীরে, তখন পশ্চিমবঙ্গে শীতের হঠাৎ বিদায়ে বর্ষবরণের মজাটাই অনেকটা চলে গিয়েছিল।
অবশেষে সেই অস্বস্তিকর অবস্থায় বদল ঘটতে চলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “শীত ফিরছে। এবং তা ফিরছে স্ব-মেজাজেই। হাড় কাঁপানো উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে।” নতুন করে কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরি না হলে শীত এ বার তার ইনিংস সম্পূর্ণ করবে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। তারা জানাচ্ছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে ঢুকছে এবং তার জেরে গোটা উত্তরভারতে শৈত্যপ্রবাহের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও তুষারপাত হচ্ছে, কোথাও সারা দিন বৃষ্টি হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সেই ঠান্ডা বাতাসই এ বার মধ্য ভারত, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে ফের ঢুকে পড়বে পশ্চিমবঙ্গে।
নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্তের জেরে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ১৬-১৭ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে গত সপ্তাহে। আজ, সোমবার থেকে তা ১১ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণবঙ্গের শ্রীনিকেতন, কৃষ্ণনগর, বহরমপুর, পানাগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সোমবার ১২ ডিগ্রিতে নেমে যেতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা।