কৃষ্ণনগরের সভায় গৌরীশঙ্কর দত্ত। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
অনুব্রত মণ্ডল, মনিরুল ইসলাম, তাপস পালদের তালিকায় এ বার নাম লেখালেন গৌরীশঙ্কর দত্ত। তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীবাবু সোমবার দুপুরে নদিয়ার কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে দলীয় সমাবেশে দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের নির্দেশ দিলেন, “সুশাম্ত ঘোষের মতো সিপিএম নেতারা আমাদের নেত্রীর সমালোচনা করলে মুন্ডুটা ছিঁড়ে নেবেন। বিজেপি মাথা উঁচু করে চোখ রাঙালে মাথা ছিঁড়ে নেবেন।”
নদিয়াতেই লোকসভা নির্বাচনের পরে নাকাশিপাড়ার চৌমুহা গ্রামে গিয়ে বিরোধীদের প্রতি “ছেলে পাঠিয়ে রেপ করে দেওয়ার” হুমকি দিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল। তেঘরি গ্রামে গিয়ে তিনি বিরোধীদের বাড়ি ভাঙচুর করার নির্দেশ দেওয়ার পরের দিনই ওই গ্রামে বিরোধীদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফলে গৌরীবাবুর এই নির্দেশে কী হতে পারে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিরোধীরা। জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “যে ভাবে তৃণমূলের হুমকির পরে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে তাতে আজকের পরে বিরোধীদের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।”
গৌরীবাবু অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাণসঙ্কটের আশঙ্কা করছেন। এ দিন যুব তৃণমূল কংগ্রেস, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল যুবার উদ্যোগে আয়োজিত ওই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “এর আগে সিপিএম ইন্দিরা গাঁধীকে ডাইনি বলে খুনের পরিবেশ তৈরি করেছিল। তিনি খুন হন। রাজীব গাঁধীর বিরুদ্ধে বফর্স কেলেঙ্কারির বদনাম দিয়েছিল। তিনিও খুন হন। মমতার বিরুদ্ধে কুৎসা করে হত্যার চক্রান্ত করা হচ্ছে।” এরপরেই তিনি বলেন, “সুশান্তদের আর কঙ্কাল পুঁততে দেব না। দরকার হলে ধড় থেকে মুন্ডু আলাদা করে দেওয়া হবে।”
সভা মঞ্চে এ দিন তৃণমূলের বেশ কিছু সাংসদ-বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন জেলার দুই মন্ত্রীও। তাঁদের সামনেই এদিন বারে বারে একই ভঙ্গিতে হুমকি দিতে থাকেন গৌরীবাবু। তাতে স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়েন নেতাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, “এক তাপস পালের বক্তব্যের ঠ্যালা সমলাতেই জেরবার হচ্ছে দল। আদালত পর্যন্ত তা নিয়ে লড়াই দিতে হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে গৌরীবাবুর এই বক্তব্য দলকে ফের বিড়ম্বনায় ফেলবে।”
তবে প্রকাশ্যে তাঁর এই বক্তব্যের জন্য গৌরীবাবু বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন। সভার পরে তাঁকে এই বিষয়ে ফোন করা হলে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘‘আমাদের এই জেলায় চৈতন্যদেব জন্মেছিলেন, এটা ঠিক। কিন্তু যারা মৃত্যুর ফেরিওয়ালা, একুশ শতকে দাঁড়িয়ে সেই সব জগাই-মাধাইদের প্রেম নিবেদন করা যায় না। আমরা সাধারণ মানুষ। চৈতন্যদেব নই।”