বর্ধমানের বিস্ফোরণ-কাণ্ডে তৃণমূলের উপরে আরও চাপ বাড়াল বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এমন ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়ার প্রশ্নে সরাসরি তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছে বিজেপি। এনআইএ-র হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার দাবি বজায় রেখে সিপিএমও প্রশ্ন তুলেছে, যে পুলিশ কর্তারা এমন ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করেন, তাঁদের উপরে আবার আস্থা রাখার মানে কী?
পাঁচ বছর আগে রাজারহাটে বৈদিক ভিলেজের ঘটনায় সিবিআই বা এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবিতে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মমতা। সেই সময়ের সংবাদপত্রের কাটিং পেশ করে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে এখন বর্ধমানের মতো গুরুতর ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তে আপত্তি করছেন কেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? তার মানে কি কিছু আড়াল করার উদ্দেশ্য আছে? বিজেপির এই প্রশ্নে স্বভাবতই প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। বর্ধমানের ঘটনার পরে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা। সিদ্ধার্থনাথের প্রশ্নের সদুত্তরও তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে মেলেনি।
বৈদিক ভিলেজের ঘটনায় অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই ঘটনার পরে ২০০৯ সালের অগস্টে মমতা বলেছিলেন, “নতুন তৈরি হওয়া এনআইএ-কে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। কিছু কিছু দিক সিবিআই-কে দিয়েও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তবে এনআইএ তদন্ত করলেই ভাল। এত অবৈধ অস্ত্র কী ভাবে এল, বার করা দরকার।” তৃণমূল নেত্রীর পুরনো এই মন্তব্য উদ্ধৃত করেই সিদ্ধার্থনাথ মঙ্গলবার বলেছেন, “এখন তো শুধু অস্ত্রই নয়! আইডি-সহ নানা বিস্ফোরক ও রাসায়নিক থেকে শুরু করে আল কায়দার নাম সংবলিত কাগজপত্র কত কিছুই পাওয়া গিয়েছে! যিনি ২০০৯-এ এনআইএ-র তদন্ত চাইলেন, তিনিই এখন আপত্তি করছেন! এ তো দ্বিচারিতা!”
বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে সোমবার দিল্লিতে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছিলেন, রাজ্য প্রশাসনের তদন্তেই মুখ্যমন্ত্রী ভরসা রাখছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে গুরুত্ব না দিয়ে এনআইএ-র তদন্ত নিয়ে হইচই করা হচ্ছে। সিদ্ধার্থনাথ এ দিন তার পাল্টা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, কোন পুলিশ এবং সিআইডি-র উপরে আস্থা রাখার কথা বলা হচ্ছে? যে পুলিশের ডিজি পাড়ুই-কাণ্ডে সদ্য আদালতে ভর্ৎসিত হয়েছেন? সিদ্ধার্থনাথের কথায়, “রাজ্যের পুলিশ যদি হার ম্যাজেস্টিস ভয়েস (এইচএমভি) হয়ে যায়, তার উপরে মানুষ ভরসা রাখবেন কী করে?” বিজেপি নেতৃত্বের তোলা প্রশ্নের সরাসরি জবাব এ দিন এড়িয়ে গিয়েছেন ডেরেক। তৃণমূলের তরফে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “প্রতি দিন বিজেপি দিল্লিতে কিছু না কিছু বলবে আর তার পরে বাংলায় তাদের মিডিয়া পার্টনার (আনন্দবাজার সংস্থা) আমাদের জবাব চাইবে! এটাই এখন চেনা ছক হয়ে গিয়েছে!” তবে বাংলার শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সিদ্ধার্থনাথকে বিঁধে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “উনি বিজেপির ভূগোলটাই ঠিকমতো চেনেন না, পশ্চিমবঙ্গের কী জানবেন?”
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন এনআইএ তদন্তের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। যে ভাবে শাসক দল ও পুলিশের পক্ষ থেকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে এদের হাতে তদন্ত রাখা যায় না। এনআইএ-কেই তদন্ত করতে দেওয়া উচিত।” ফরেন্সিক তদন্তের আগেই পুলিশ কেন বিস্ফোরক ফাটিয়ে ফেলল, সেই প্রশ্ন তুলে সূর্যবাবুর অভিযোগ, “ওই এসপি থাকলে ধামাচাপা দেওয়া ছাড়া কিছু হবে না!”