টাকা নেই, ১০০ দিনের কাজ বন্ধে বৃষ্টির প্রার্থনা

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে...। বিপুল ঘাটতি নিয়ে অবশেষে এসেছে বর্ষা। তাই চাষের স্বার্থে বাংলার কৃষক এখনই ভারী বৃষ্টি চান। আর প্রবল বর্ষণ চান রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা। বৃষ্টির দাপটে যাতে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে হয়।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

আয় বৃষ্টি ঝেঁপে...।

Advertisement

বিপুল ঘাটতি নিয়ে অবশেষে এসেছে বর্ষা। তাই চাষের স্বার্থে বাংলার কৃষক এখনই ভারী বৃষ্টি চান।

আর প্রবল বর্ষণ চান রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা। বৃষ্টির দাপটে যাতে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে হয়।

Advertisement

কেন? কারণ, কাজ করিয়ে মজুরি মেটানোর অবস্থায় নেই পঞ্চায়েত দফতর। ইতিমধ্যেই চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসের টাকা বকেয়া পড়ে গিয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় বরাদ্দ চলে এসেছে আর্থিক বছরের শুরুতেই। কিন্তু গত বছরের বকেয়া মজুরি আর রাজ্যের অর্থ দফতরের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করতেই তা খরচ হয়ে গিয়েছে। ফলে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে ১০০ দিনের কাজ করেও মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। রাস্তা তৈরি এবং অন্যান্য নির্মাণকাজে যাঁরা কাঁচা মাল সরবরাহ করেন, তাঁদেরও টাকা দেওয়া যাচ্ছে না বলে পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর।

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ২০১৩-’১৪ সালে দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি দিন কাজ দিয়েছিল কেরল ও কর্নাটক। পরিবার-পিছু গড়ে ৫৭ দিন করে। গত বছর গড়ে ৫২ দিন করে কাজ দিয়েছে ছত্তীসগঢ় এবং হিমাচলপ্রদেশও। সেই জায়গায় এ রাজ্যে পরিবার-পিছু গড়ে কাজ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮ দিন। অর্থাৎ এই প্রকল্পের কর্মকাণ্ড এখনও অনেকটাই বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কাজ করিয়ে টাকা মেটানোর অবস্থাতেই যে নেই পঞ্চায়েত দফতর!

এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে ফের ৪০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাতেও সামাল দেওয়া যাবে বলে ভরসা করা যাচ্ছে না। তাই পঞ্চায়েত-কর্তারা একটানা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন, যাতে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পটিই সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয়। কারণ, জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের আগে আর দিল্লির টাকা আসার সম্ভাবনা নেই। ফলে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র ফের টাকা না-পাঠালে শ্রমিকদের মজুরি মেটানো কার্যত অসম্ভব। পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা তাই বর্ষার কৃপা চাইছেন।

সঙ্কটের কথা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “খুবই সমস্যায় আছি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের সঙ্গে বৈঠক স্থির হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর ফলে সেই বৈঠক হয়নি। নতুন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের জন্য বাড়তি টাকার দরবার করব।” কিন্তু সেই টাকা আসার আগে পর্যন্ত কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন?

পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানান, অর্থ দফতরের কাছ থেকে ঋণ নিয়েই এখন সামাল দিতে হবে। তবে বর্ষা এসে যাওয়ায় ১০০ দিনের কাজে এখন তেমন চাহিদা থাকে না। শ্রমিকেরা চাষের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আবার যখন কাজের চাহিদা হবে, তত দিনে টাকার ব্যবস্থাও হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সুব্রতবাবু।

পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে মজুরি এবং কাঁচা মালের দাম বাবদ ১৯৬২ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। রাজ্যের অভিযোগ, গত বছর ১০০ দিনের প্রকল্পে রাজ্যে যে-পরিমাণ কাজ হয়েছে, সেই অনুপাতে টাকা দেয়নি কেন্দ্র। ফলে অর্থ দফতর থেকে ৬৫৬ কোটি টাকা ধার নিয়ে কোনও ক্রমে তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। চলতি আর্থিক বছরের শুরুতে কেন্দ্র এই প্রকল্পে ১৭৮৩ কোটি টাকা পাঠায়। সেই টাকা থেকে অর্থ দফতরের কাছে নেওয়া ঋণের ২০০ কোটি শোধ করে পঞ্চায়েত দফতর। চলতি মাসে গত বছরের বকেয়া মজুরি বাবদ মেটানো হয় ১২১১ কোটি টাকা। ১৯৬২ কোটি টাকার মধ্যে ১২১১ কোটি মেটানোর পরে গত বছরের মজুরি বাবদই বকেয়া রয়ে যায় ৭৫১ কোটি টাকা। ফলে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে বারবার দরবার করেও পুরো মজুরি পাননি লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। তার উপরে যুক্ত হয়েছে এ বছরে কাজ করিয়েও মজুরি দিতে না-পারার সমস্যা।

পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে ইতিমধ্যেই ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে দু’কোটি ৪০ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। সেই কাজের মজুরি বাবদ জন্য শ্রমিকদের প্রাপ্য ৭১৫ কোটি টাকা। অথচ গত তিন মাসে এই খাতে মাত্র ১৪১ কোটি মজুরি মেটাতে পেরেছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে কাজের জন্যও বকেয়া মজুরির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭৪ কোটি টাকা।

১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এক কর্তা জানান, বিগত এবং চলতি বছর মিলিয়ে এখন শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩২৫ কোটি টাকা। ফলে রাজ্য এখনই সাময়িক ভাবে কিছু টাকা না-মেটালে পরিস্থিতি সামলানো মুশকিল হবে। বকেয়া মজুরির টাকা চেয়ে জেলাশাসকেরা দরবার করছেন। ওই কর্তা জানান, কাঁচা মাল সরবরাহকারীদের টাকা হয়তো কিছু দিন পরেও দেওয়া চলে। কিন্তু ওই প্রকল্পের আইনেই বলা আছে, কাজ করার সাত দিনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দিতে হবে। দীর্ঘদিন মজুরি না-পেলে শ্রমিকেরা আদালতেরও দ্বারস্থ হতে পারেন।

পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রীও। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। শ্রমিকদের মজুরি যাতে মিটিয়ে দেওয়া যায়, তার জন্য কোনও না-কোনও পথ বার করতেই হবে।”

এখনও পর্যন্ত সেই পথের সন্ধান মেলেনি। তাই আপাতত বর্ষাই ভরসা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement