জলাভূমি বুজিয়ে দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে যন্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।
বর্ধমান শহরের প্রায় ৩০০ বিঘার জলাভূমি ভরাটের চেষ্টার অভিযোগ উঠল আবার। স্থানীয়দের দাবি, সকলের অজান্তে মাটি খোঁড়ার মেশিন নিয়ে এসে ‘শশাঙ্ক বিল’ বুজিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শহরের ‘কিডনি’ বেদখলের অভিযোগ উঠছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ‘বিতর্কিত’ শশাঙ্ক বিলের জমির চরিত্র বদল হয়। ২০১৫ সালে জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক জমির চরিত্র হাউসিং কমপ্লেক্সে পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে জমির চরিত্র বদলের যে দাবি পুরসভা করছে, তাতে বিস্তর গলদ ধরা পড়ে। ২০১৪ সালের ৮ মার্চ পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান একটি নির্দেশিকা জারি করেন। তাতে উল্লেখ ছিল, হাই কোর্টের আইনজীবীর অতিরিক্ত হলফনামা অনুযায়ী পুরসভার যে ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, তাতে জালিয়াতি করা হয়েছে। শংসাপত্রে চেয়ারম্যানের সই জাল করার এবং ভুয়ো মেমো নম্বর বসানোর অভিযোগ ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়েন। তদন্তের পর চেয়ারম্যান ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেটের বিষয়ে তাঁর আপত্তির কথা জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিককে জানিয়েছিলেন। বর্ধমান থানায় এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। তার পর হঠাৎ করে জলাভূমি বোজানোর কাজ শুরু হওয়ায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
পুরসভার রেকর্ড অনুযায়ী, জমিটি ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ৩৩৩ নম্বর দলিল মূল্যে বিক্রি হয়। সেই সময় জমির চরিত্র যে বিল এবং জলাভূমি ছিল তা পুরসভার নথিতেই পরিষ্কার। জমির চরিত্র বদলের আবেদন জমা পড়ার পর পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলার এবং আধিকারিকেরা জমি পরিদর্শনে যান। সে সময় পুরসভার তরফে বিভিন্ন দফতরে জমির চরিত্র বদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়। তার পরেও কী ভাবে জলাজমি শালিতে পরিণত হল তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। অন্য দিকে, এমন একটি গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান কেন শুধু জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করতে থানার আইসিকে অনুরোধ করেছিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মামলা রুজু না হওয়ার পিছনে কোনও প্রভাবশালী যোগ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
রবিবার বর্ধমান শহর থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড এবং তার আশপাশে প্রচার শুরু করে বিজ্ঞানমঞ্চ। বিজ্ঞানমঞ্চের পূর্ব বর্ধমান জেলার কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই জলাশয় যেমন আছে, তেমনই থাকুক। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ থেকে আবারও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। তাতেও কাজ না হলে গ্রিন বেঞ্চে আবেদন করব আমরা। সাধারণ মানুষকে নিয়ে ‘শশাঙ্ক বিল’কে রক্ষা করা হবে।’’ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, শাসকদলের সহায়তাতেই বিশাল জলাভূমি ভরাটের চেষ্টা শুরু হেয়েছে। কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন, ‘‘শাসকদলের মদত এখানে আছেই। নইলে এ কাজ সম্ভব নয়।’’ পূর্ব বর্ধমানের সিপিএম জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘শাসকদল সরাসরি যুক্ত রয়েছে। পুরসভার উচিত, অবিলম্বে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা।’’ যদিও তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘‘যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে তো ভাল। নইলে কাজ বন্ধ করা হবে।’’ তবে পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার এ নিয়ে কিছু বলতে নারাজ।