সোমবার জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে ফুটবলে শট মেরে দেখাচ্ছেন প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
চুপিসারে শহর মেদিনীপুরের রাতের চেহারা দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। জঙ্গলমহল কাপ-সহ একাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রবিবার সন্ধ্যায় শহরে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। ওঠেন সার্কিট হাউসে। পুলিশের এক সূত্রে খবর, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আচমকাই সার্কিট হাউস থেকে বেরোন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও কনভয় ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির সামনে ছিল শুধুমাত্র পুলিশ সুপারের গাড়ি। মিনিট পনেরো পর গাড়ি দু’টি সার্কিট হাউসে ফিরে আসে। পুলিশের ওই সূত্র জানাচ্ছে, রাতের শহরের চেহারা দেখতেই চুপিসারে সার্কিট হাউস থেকে বেরোন মুখ্যমন্ত্রী। কেরানিতলা-সহ একাধিক এলাকা দেখেন তিনি।
সার্কিট হাউসের অদূরেই রয়েছে চার্চ স্কুল মাঠ। বড়দিন উপলক্ষে এই মাঠে মেলাও বসেছে। রঙিন আলোয় সেজে উঠেছে আশপাশের এলাকা। রবিবার সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে ঢোকার সময় আলোকসজ্জা দেখে মুখ্যমন্ত্রী কয়েক জনের কাছে জানতেও চান, “এখানে কী হচ্ছে? বড়দিনের মেলা?” মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়, চার্চ স্কুল মাঠে বড়দিনের মেলাই হচ্ছে। পুলিশের একটি মহল মনে করছে, ওই দিন রাতে শহর দেখার পাশাপাশি চার্চেও ঢুকতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি যখন বেরোন, ততক্ষণে চার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেলাও সেই দিনের মতো শেষের দিকে।
মেলার মাঠে ভিড়ও অনেকটাই পাতলা হয়েছে। একে একে দোকানগুলোও বন্ধ হতে শুরু করেছে। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ অবশ্য মেলায় আসেন জেলা পুলিশ সুপার ভারতীদেবী। সার্কিট হাউস থেকে বেরনোর পর পুলিশ সুপারের গাড়ি কেরানিতলার দিকেই যাচ্ছিল। আচমকা ভারতীদেবী গাড়ি থামাতে বলেন। গাড়ি ঢোকে মেলার মাঠে। কিছুটা দূর গিয়ে গাড়ি থেকে নেমেও পড়েন জেলা পুলিশ সুপার। এক দোকানে ঢুঁ মারেন। টুকটাক কিছু কেনাকাটা করেন। মিনিট দশেক মেলার মাঠে ছিলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী কী রাতে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়েছিলেন? হেসে ভারতীদেবী বলেন, “কে বলল? ও সব গুজব।” চার্চের ফাদার জয় ডি সুজা অবশ্য জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী রাতে শহরে বেরিয়েছিলেন বলেই তাঁর কাছে খবর। তিনি চার্চের পাশ দিয়েও গিয়েছেন। কেমন? ফাদারের কথায়, “রবিবার রাতে এক পুলিশ অফিসার ফোন করেছিলেন। ফোনটা ধরতে পারিনি। সোমবার সকালে জানতে পারলাম, মুখ্যমন্ত্রী রাতে শহরে বেরিয়েছিলেন। পুলিশ সুপার রাতে মেলায়ও আসেন।”
গত জুলাই মাসে মেদিনীপুরে এসে শহরে ফুটপাথ তৈরির নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরসভা পরিকল্পনা তৈরি করেছে। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। মেদিনীপুর শহরে যানজট সমস্যা নতুন নয়। শহরে আলাদা ভাবে কোনও ফুটপাথ নেই। বাধ্য হয়ে পথচারীদের রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হয়। যত দিন যাচ্ছে, ততই সংকীর্ণ হচ্ছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো। দু’পাশে মাথা তুলছে একের পর এক ছোট ছোট দোকান। পরিস্থিতি দেখেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোয় ফুটপাথ অর্থাৎ, পাথওয়ে তৈরির নির্দেশ দেন মমতা। জেলা পুলিশের এক কর্তা মনে করছেন, “রাতের শহরের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই বেশি কাউকে না বলে পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন।” তবে শুধু নীচুতলার পুলিশ কর্মীরা নন, মুখ্যমন্ত্রীর চুপিসারে শহর পরিদর্শন নিয়ে কিছু জানানো হয়নি জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তাদেরও। কেন? জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “অনেকে জানতে পারেননি ভালই হয়েছে। না- হলে হয়তো সুষ্ঠু ভাবে ওঁনার (মুখ্যমন্ত্রী) শহর দেখাই হত না।” এটা অজানা ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের কাছেও। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান তথা শহরের তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্রনাথ দাস সোমবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী শহর পরিদর্শন করেছেন বলে সত্যিই কিছু জানা নেই।”