আড়াই বছরের আগে অনাস্থা নয় পঞ্চায়েতে, আসছে বিল

পঞ্চায়েতে অনাস্থা ঠেকাতে আইন সংশোধন করতে চলেছে রাজ্য। নতুন আইন অনুযায়ী এ বার থেকে পঞ্চায়েতের প্রধান বা উপ-প্রধানকে ভোটের আড়াই বছরের মধ্যে সরানো যাবে না। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ তিনটি স্তরেই এই নতুন আইন কার্যকর হবে। বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই এই সংশোধনী বিল পেশ হতে চলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

পঞ্চায়েতে অনাস্থা ঠেকাতে আইন সংশোধন করতে চলেছে রাজ্য। নতুন আইন অনুযায়ী এ বার থেকে পঞ্চায়েতের প্রধান বা উপ-প্রধানকে ভোটের আড়াই বছরের মধ্যে সরানো যাবে না। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ তিনটি স্তরেই এই নতুন আইন কার্যকর হবে। বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই এই সংশোধনী বিল পেশ হতে চলেছে।

Advertisement

চালু আইন অনুযায়ী পঞ্চায়েতের প্রধান বা উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে এক বছরের মধ্যে অনাস্থা আনা যায় না। পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত (দ্বিতীয় সংশোধন) বিল, ২০১৪ এনে এই ব্যবস্থাই বদলাতে চাইছে রাজ্য। সংশ্লিষ্ট আইনের ১২, ১০১ ও ১৪৬ ধারায় পরিবর্তন এনে বলা হচ্ছে, ভোটের আড়াই বছরের মধ্যে পঞ্চায়েতের কোনও স্তরেই প্রধানদের সরানোর জন্য তলবি সভা ডাকা যাবে না। বিলে বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত সংস্থার স্থায়িত্ব রক্ষা করে জন পরিষেবার উন্নয়ন এবং প্রধানদের অপসারণ করার নিয়মের ‘অপব্যবহার’ আটকাতেই আইন বদল হচ্ছে। কিন্তু গ্রামে গ্রামে অনাস্থা নিয়ে শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বাগে আনতে না পেরেই যে আইনি পথে যেতে হচ্ছে, তা মানছেন দলের নেতারাই।

কিছু দিন আগেই অনাস্থা এনে ভাঙড়ের বেঁওতা গ্রাম পঞ্চায়েত দখল নেওয়ার চেষ্টাকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে দু’জন খুন হন। তার জেরে ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনাস্থা ও পঞ্চায়েতের দখলের চেষ্টাকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠী-বিবাদ জেলায় জেলায় নিয়মিত ঘটনা। দলে শৃঙ্খলার বার্তা দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না দেখেই এ বার পঞ্চায়েতগুলিকে আইনি রক্ষাকবচ দেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা। পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে গত বছর। বর্তমান আইনে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা-পর্বের পরেই অনাস্থা প্রস্তাব এনে পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখলের খেলা শুরু হয়েছে। আইনের সংশোধন হয়ে গেলে ভাঙড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকে আরাবুলকে আপাতত সরানো যাবে না! কারণ, ওই পদে তাঁর আড়াই বছর হয়নি!

Advertisement

আরও একটি উদ্দেশ্য এই আইন সংশোধনের পিছনে কাজ করছে বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে উত্তর দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ারের মতো জেলা পরিষদ বিরোধী দল ভাঙিয়ে সবই দখল নেওয়া হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের। শাসক দলের কাজে বিরক্ত হয়ে তৃণমূলের একাংশ এখন ভিড়তে চাইছে বিজেপিতে। গ্রামবাংলার রাজনীতিতে প্রধান বা সভাপতির পদ পাওয়ার টোপ দেখিয়ে অনেককেই দলে টানা হয়। প্রধান বা সভাপতির পদ যদি আইনি পথে ‘সুরক্ষিত’ করে দেওয়া যায়, তা হলে তার লোভে কেউ বিজেপি বা অন্য দলে যাবেন না বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন! শাসক দলের এক নেতার কথায়, “গ্রামবাংলার পরিস্থিতি বিচার করেই আইন বদল করা হচ্ছে। যা অবস্থা, তাতে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পরিষেবা এবং উন্নয়নের কাজই বাধা পাওয়ার উপক্রম। তাই পঞ্চায়েতকে স্থায়িত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

যদিও বিরোধীদের আশঙ্কা অন্য। বাম শিবিরের এক বিধায়কের কথায়, “এখন পঞ্চায়েতের সর্ব স্তরে দুর্নীতির ছড়াছড়ি। প্রধান যদি দেখেন আড়াই বছরের জন্য তিনি নিশ্চিন্ত, তা হলে বেপরোয়া হবেন!” বিরোধীদের দাবি, অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে এমন ব্যবস্থা করে দল বাঁচাতে পারবে না তৃণমূল!

বিতর্কের আর্জি মানসের

বিধানসভায় কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেননি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জেরে বিধানসভা পরিচালনার বিধি নিয়েই বিতর্কের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাল কংগ্রেস। বিধানসভার কার্যবিধির ১৯৯ ধারা অনুযায়ী সোমবার অধিবেশন শুরুর আগে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছিল তারা। স্পিকার জানান, বামেরা শুক্রবারেই অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। তাই ৩১১ ধারা মেনে তাঁদের প্রস্তাব গৃৃহীত হচ্ছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, ৩১১ ধারা সাধারণ নোটিসের জন্য। অনাস্থার জন্য নয়। কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া স্পিকারকে চিঠি দিয়ে বলেন, “স্পিকার বিতর্কের ঊর্ধ্বে। কিন্তু আইনের ভুল ব্যাখ্যায় যাতে বিধানসভায় আর কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে, তার জন্যই বিধি নিয়ে পুরোদস্তুর বিতর্ক দরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement