চ্যাংদোলা করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিক্ষোভকারী শিক্ষককে। বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
কখনও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন তো কখনও প্রেসিডেন্সিতে। আবার ১৪৪ ধারা ভেঙে শিক্ষকপদ প্রার্থীদের অনশন চলছে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র সল্টলেকের দফতরে।
এ ভাবে অনশন-আন্দোলন যে ক্রমে সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠছে, বুধবার কার্যত তা স্বীকার করে নিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন তিনি। বুধবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী ভবনে উপাচার্য এবং বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ে অনুষ্ঠানে কার্যত হতাশ হয়ে তিনি বলেন, “কোথাও শিক্ষক হওয়ার জন্য অনশন, কোথাও শিক্ষক তাড়ানোর জন্য অনশন! আমরা কোথায় যাচ্ছি? কে আমাদের বোঝাবে? কে আমাদের বলবে?”
যাদবপুরে অনশন-আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উপাচার্যের ইস্তফার ব্যবস্থা করে সেই অনশনে ইতি টানতে হয়। সেই সমস্যা থেকে বেরোতে না-বেরোতেই ফের এক দফা অনশন-আন্দোলনের সামনে পড়ে সরকার। এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষকপদ প্রার্থীরা চাকরির দাবিতে অনশন শুরু করেন। খোদ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে সোমবার পথ অবরোধ করেন তাঁরা। তার উপরে মঙ্গলবার নতুন করে শুরু হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের অনশন। সব মিলিয়ে কার্যত পর্যুদস্ত সরকার।
পার্থবাবু আসছেন শুনেই কলেজ ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের কিছু আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বেলা ১২টা নাগাদ পিছনের গেট দিয়ে শতবার্ষিকী ভবনে ঢোকানো হয় মন্ত্রীকে। তিনি ফিরে যাওয়ার মুখে ফের বিক্ষোভ হয়। সংগঠনের তরফে সোহিনী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক। আমাদের পাঁচ দিনের কাজ চাই। চাই নির্দিষ্ট বেতন-কাঠামো। তাই অনশন।”
কিছু পরেই পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। সরকার ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার পরেই চ্যাংদোলা করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় আট জনকে। এর প্রতিবাদে অবরোধ হয় কলেজ স্ট্রিটে। সেখানে গ্রেফতার হন ১২ জন।
পার্থবাবু এ দিনের অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন অন্য প্রসঙ্গে। আচমকাই অনশনের কথা তুলে বলেন, “সরকারের হাতে কিছু নেই। যা করার আপনাদের (শিক্ষক-অধ্যাপকদের) করতে হবে। আপনারাই তো ছাত্র গড়েন। নতুন প্রজন্মকে আগে নিয়ে যান।” তাঁর আক্ষেপ, সরকার কিছু করলেই গালাগাল খায়। স্বশাসিত সংস্থার ব্যাপারে ঢোকে বলে অভিযোগ ওঠে।
যাদবপুরে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের যে-সমালোচনা হয়েছিল, শিক্ষামন্ত্রী এ দিন তারই জবাব দিতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা। তাদের বক্তব্য, সরকার যাদবপুরে ঘা খাওয়ার পরেই শুরু হয়েছে অনশনের হিড়িক। সমস্যায় পড়ে শিক্ষকদের পাশে চাইছেন মন্ত্রী। তাঁদের মনোবল বাড়াতে কারও কাছে মাথা নত না-করার পরামর্শও দিলেন মন্ত্রী। যে-কোনও অবস্থায় তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রীর মাথাব্যথা বাড়িয়ে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন এসএসসি প্রার্থীরা। পুলিশ জোর করে অনশন তুলতে চাইছে বলে তাঁদের অভিযোগ। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রশাসন।