ভোটের আগে এ ভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে পড়ুয়াদের। ছবি: অনির্বাণ সেন।
ক্ষমতার যথাযথ প্রয়োগ এবং সদিচ্ছার জোরে যে কলেজ-ভোটের নিরন্তর সংঘর্ষ এড়ানো যায়, ফিরিয়ে আনা যায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশবৃহস্পতিবার, মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজ তারই উদাহরণ হয়ে থাকল। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওই নির্বিঘ্ন-নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন করার পরে কলেজ-অধ্যক্ষ অমিত চক্রবর্তী বিরোধীদের প্রশংসা আদায় করে নিলেও শাসক দলের কাছে অবশ্য ফিরে পেয়েছেন ‘ষড়যন্ত্রকারীর’ তকমা।
বৃহস্পতিবার বীরভূমের ওই কলেজে পুলিশ ডেকে শাসক দলের বহিরাগত নেতা-কর্মীদের বের করে দিয়ে নির্বাচন করানোর পরে টিএমসিপি ছাত্র সংসদ দখল করলেও ফলাফল দাঁড়িয়েছে টিএমসিপি ১০, এসএফআই ৯।
যা দেখে মল্লারপুরের টিএমসিপি-র ব্লক সভাপতি অভিজিৎ মণ্ডল বলছেন, “ওই অধ্যক্ষ সিপিএমের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন করিয়েছেন।” আর, এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি দেবজ্যোতি দাসের প্রতিক্রিয়া, “আসল কথাটা হচ্ছে সদিচ্ছা। মল্লারপুর কলেজ অধ্যক্ষ সেটাই করে দেখিয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসন চাইলে রাজ্যের অন্যত্রও এই দৃশ্য দেখা যাবে।” এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুবীর হালদার বলছেন, “শিক্ষক সমাজের সকলেই যে দলদাল হয়ে যাননি ওই অধ্যক্ষ তারই প্রমাণ।”
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে টিএমসিপি-র ‘অনুশাসন’-এর জেরে, মনোনয়নপত্রই জমা দিতে পারেনি বিরোধীরা। কোথাও তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে কলেজ-গেটের বাইরে। কোথাও বা রীতিমতো মারধর করে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে কলেজের ত্রিসীমানা থেকে। এ ব্যাপারে অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষই, ঘটনা ঘটেছে কলেজ চত্বরের বাইরে, বলে দায় এড়িয়েছে।
অমিতবাবু এখানেই ব্যতিক্রম। সংঘর্ষের ইশারা মিলতেই এ দিন তিনি কলেজে তলব করেন পুলিশ। তার পর নির্দেশ দেন, বহিরাগতদের হঠিয়ে দেওয়ার। একই ভাবে, কলেজে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারেও উদ্যোগী হয়েছিলেন তিনি। বিরোধীরাও যাতে মনোনয়নপত্র তুলতে বা জমা দিতে পারে, সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি ছিল তাঁর। সে কারণেই জেলার অন্য কলেজগুলিতে যেখানে একতরফা ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে টিএমসিপি সেখানে এই কলেজটিতেই কোনও বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পেরেছিল। ছাত্র সংসদ নির্বাচনও তাই গড়িয়েছিল ভোটভুটিতে। বৃহস্পতিবারই শান্তিপূর্ণ ভাবে সেই ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পরে হাডাডহাড্ডি লড়াইয়ে ফল অবশ্য গিয়েছে টিএমসিপি-র পক্ষে ১০-৯।
অমিতবাবু অবশ্য এক মধ্যে বিশেষ কোনও দক্ষতা দেখছেন না। তিনি বলেন, “ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীরা যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বা তুলতে পারে সেটাই দেখা হয়েছিল। কলেজের ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব আমার। অধ্যক্ষ হিসেবে সেটুকুই করেছি।” তাঁর এই গণতান্ত্রিক পদ্ধিতেই ‘আপত্তি’ টিএমসিপি-র। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “আমরা এমন কিছু করি না, যে জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হবে!”
তবে, ‘সারা বাংলা অধ্যক্ষ পরিষদে’র সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মনোনয়ন পেশে মারের অভিযোগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিরোধী ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয় ডিএসও এবং এসএফআই প্রার্থীদের। ডিএসও জানায়, টিএমসিপি-র মারধরে তাদের তিন কর্মী জখম হন। তাদের ৫০ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছেন। এসএফআইয়ের অভিযোগ, তাদের ১৮০টি মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলে দেয় টিএমসিপি-র কর্মীরা। আক্রান্ত হন তাদের দুই কর্মী। প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতীকী অবরোধ হয় রাস্তায়। জোড়াসাঁকো থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে। সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসিপি।