তরুণ ব্রিগেডের লড়াই উৎসাহ বাড়াল সিপিএম তথা বামেদের। ছবি পিটিআই।
রাজ্য রাজনীতির পরিসরে বিজেপি এবং তৃণমূলের দ্বিমেরু ভাষ্যই জাঁকিয়ে বসেছে। তার উপরে রাজ্যে বিজেপির কর্মসূচিতে উপস্থিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নির্বাচনের মুখে এমন দিনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তরুণ ব্রিগেডের লড়াই উৎসাহ বাড়াল সিপিএম তথা বামেদের। পুলিশি হামলার অভিযোগকে সামনে রেখে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সঙ্গে বিজেপিকে এক বন্ধনীতে রেখেই আক্রমণ শানাল তারা। বিজেপি না তৃণমূল, কে বড় শত্রু— এই নিয়ে বিতর্কের আবহে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এ বার অন্তত মুখ খুলতে হল অন্য বাম দলগুলিকেও। যা রাজনৈতিক ভাবে সিপিএমের পক্ষে আর এক স্বস্তির কারণ!
কর্মসংস্থান ও শিল্পের দাবিতে এবং রাজ্যে সরকার বদলের ডাক দিয়ে নবান্ন অভিযানের কর্মসূচি নিয়েছিল ১০টি বামপন্থী যুব ও ছাত্র সংগঠন। গোটা অভিযানে বৃহস্পতিবার সিপিএমের নেতারা কেউ সামনে বা মিছিলে ছিলেন না। রাজপথ ভরিয়ে শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিল এনে এবং পুলিশের মার খেয়ে নানা জায়গায় দফায় দফায় অবরোধ করে দিনভর যা করার, করেছেন বাম যুব ও ছাত্র নেতারাই। তাঁদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খান ও ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ মিছিল নিয়ে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন। সিপিএম এবং আরএসপি-র যুব সংগঠনের দুই রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র আহত হয়েছেন, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন। পুলিশের মারে আহত ছাত্র ও যুব নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে নানা হাসপাতালে গিয়েছিলেন সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, তন্ময় ভট্টাচার্য, সুশান্ত ঘোষ, কংগ্রেসের শুভঙ্কর সরকারেরা। কিন্তু কর্মসূচির রাশ ছিল তরুণদের হাতেই।
এ বার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ে তরুণ প্রজন্মকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটি। কলকাতার রাজপথে এ দিন তরুণ প্রজন্মের ‘পারফরম্যান্স’ দেখে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও সকলের জন্য কাজ ও শিক্ষার দাবিতে হাজার হাজার ছাত্র ও যুব শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করেছেন। বাংলার তরুণ প্রজন্ম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দমনের নীতি নিয়ে তাদের দমানো যাবে না’’ একই ভাবে দলের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘একে তো বামেদের খুঁজে পাওয়া যায় না! পেলেও বলা হয়, সব ষাটোর্ধ্বদের ভিড়! এখন ধর্ম নিয়ে যখন রাজনীতি চলছে, সেই সময়ে কর্মের দাবিতে লড়াই করে দেখিয়েছেন বামপন্থী যুব ও ছাত্রেরা।’’
শাসক তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘ছেলেমানুষি রাজনীতি না করে ওঁরা মানুষের কাজে মন দিন! গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনের অধিকার সকলেরই আছে। শুধু বাজার গরম করে লাভ কী!’’
শহরের রাস্তায় বুধবার রাত থেকে গর্ত করে ধাতব ব্যারিকেড লাগিয়ে বামেদের ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল পুলিশ। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ দিন সেলিম বলেছেন, ‘‘দিল্লিতে মোদী সরকার কী করছে, দেখা যাচ্ছে। কলকাতাতেও সিঙ্ঘু সীমানা দেখাল দিদির সরকার!’’ দিল্লিতে বিজেপি সরকারের আচরণের সঙ্গে এ দিনের ঘটনার তুলনা টেনেই কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষী পুলিশ আধিকারিকদের শাস্তির দাবি করেছেন। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ‘স্বৈরাচারী’ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আজ, শুক্রবার ধর্মঘটে জবাব দেওয়ার ডাক দিয়েছেন।
সিপিএমের মতোই সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের কার্তিক পালও বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘মোদী সরকার যে ভাবে কৃষক আন্দোলন-সহ বিভিন্ন আন্দোলনকে হীন কায়দায় দমনের বাতাবরণ তৈরি করেছে, সেই পরিস্থিতিতে বিরোধী দল শাসিত একটি রাজ্যে এই পুলিশি দমন বিশেষ ভাবে অনভিপ্রেত।’’ ধর্মঘটে ‘নৈতিক সমর্থন’ দিয়েছে তারা। রাজ্য সরকারের ‘স্বৈরাচারী শাসনে’র নিন্দা করে ও ছাত্র-যুবদের উপরে ‘অমানবিক আক্রমণে’র প্রতিবাদ জানিয়ে বাম ও কংগ্রেসের ডাকা ধর্মঘটকে সমর্থন করেছেন ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) আব্বাস সিদ্দিকী। আবার ধর্মঘট থেকে কৌশলী ‘দূরত্ব’ রেখেও পুলিশি আচরণের নিন্দা করেছে এসইউসি-র নানা সংগঠন এবং পিডিএস। ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি’র সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘‘কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে মোদী সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আর আজ কলকাতায় যা ঘটল, তার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।’’