প্রতীকী ছবি।
খুনের মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে গেল। অথচ ঘটনার সময় তিনি যে নাবালক ছিলেন, সেই অতি জরুরি তথ্যটি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্ট, সকলেরই নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ‘বিচার’ পেলেন বালেশ্বরের রবীন্দ্র সাঁতরা।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সম্প্রতি জানিয়েছে, ‘অবিচার’ হয়েছে রবীন্দ্রের সঙ্গে। এই ‘বিচার’ ও ‘অবিচার’-এর মাঝখানে পড়ে তাঁর পনেরোটি বছর কেটে গিয়েছে লৌহকপাটের অন্তরালে। বিচার মেলায় আপাতত জেল থেকে জামিনে মুক্তি মিলছে তাঁর। তবে আলিপুর থানার যে-খুনের মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল, তার পুনর্বিচারের আবেদন এখনও উচ্চ আদালতের বিচারাধীন।
রবীন্দ্রের আইনজীবী অমিত মৈত্র জানান, দেশের আইন অনুযায়ী খুনের মামলায় কোনও নাবালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া যায় না। হত্যাকাণ্ডের সময় রবীন্দ্র যে নাবালক ছিলেন (বয়স ১৫ বছর সাত মাস), আলিপুর জেলা ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে সেটা খেয়াল করা হয়নি। এমনকি কলকাতা হাইকোর্টেও দু’-দু’বার তাঁর জামিনের আবেদন খুঁটিয়ে দেখার সময় ধরা পড়েনি যে, খুনের সময় রবীন্দ্র ছিলেন নাবালক। দু’বারই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। ওড়িশা থেকে আনানো বালেশ্বরের ওই যুবকের জন্ম-তারিখ ও স্কুলের শংসাপত্র পরীক্ষা করে প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করন নায়ার রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে জামিন দিয়েছে। বেঞ্চের নির্দেশে জলপাইগুড়ি জেল থেকে আগামী সপ্তাহেই ছাড়া পাবেন তিনি।
পুলিশ জানায়, ২০০৪-এর ১১ অগস্ট রাত থেকে পরের দিন ভোরের মধ্যে ললিতাদেবী গোয়েনকা (৭৬) নামে আলিপুরের অশোকা রোডের একটি ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দা খুন হন। ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের দরজা ভেঙে তাঁর গলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃদ্ধার দুই ছেলে হেমন্ত ও প্রদীপ নীচের দু’টি ফ্ল্যাটে থাকতেন। বৃদ্ধা এবং তাঁর দুই ছেলের আট জন পরিচারক ও পরিচারিকা ছিলেন। রবীন্দ্র তাঁদের অন্যতম। বৃদ্ধার ঘর থেকে কিছু গয়না খোয়া যায়। সেই খুনের ঘটনায় বালেশ্বরের রাজনগরের বাসিন্দা রবীন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়।
আইনজীবী অমিতবাবু জানান, ২০০৮ সালে নিম্ন আদালতের বিচারক ওই যুবককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন। রবীন্দ্র সেই সময় ভুল করে জানান, তাঁর বয়স ২১ বছর। যদি তিনি ভুলও বলে থাকেন, তা হলেও ঘটনার সময় (২০০৪ সালে) তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর। অর্থাৎ তখনও তিনি নাবালক। তা সত্ত্বেও তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় নিম্ন আদালত।
জামিন চেয়ে রবীন্দ্র দু’বার উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রতি বারেই আর্জি খারিজ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত গত ২১ জানুয়ারি রবীন্দ্রের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তাদের পর্যবেক্ষণ, প্রথম বার জামিনের আবেদন খারিজের সময় হাইকোর্ট জানায়নি, কেন তা খারিজ করা হচ্ছে। সেই সময় রবীন্দ্রের হয়ে কোনও আইনজীবীও হাজির ছিলেন না। ডিভিশন বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, হত্যাকাণ্ডের কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের উপরে ভিত্তি করেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।