মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে বিজেপিকে অনেকটা কমিয়ে দিয়ে রাজ্যে জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু সেই জয়ের রাস্তায় যে বিস্তর খানাখন্দ রয়েছে, তা-ও ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন তৃণমূলের নেতারা। সেই প্রেক্ষাপটেই ভোটের পরে রাজ্য মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সতীর্থদের ‘সতর্ক’ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রের খবর, বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মানুষের কাছে না গেলে ভোটে জেতা যাবে না। জনসংযোগে যে ‘ঘাটতি’ রয়েছে, তা-ও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অবিলম্বে সেই খানাখন্দ মেরামতের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মন্ত্রী হলে অনেকে এমন একটা জীবনযাপন করেন যে, মানুষ ভাবেন মন্ত্রী মানে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দিদি সেই রোগটাই কাটাতে বলেছেন।’’ সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের ফলাফল নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সেখানেও তো অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু মানুষ কেন তা-ও তৃণমূলকে সমর্থন করছেন না, তা দেখতে হবে। সূত্রের খবর, কোচবিহার আসন বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
লোকসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। আসানসোল, বিধাননগর, শিলিগুড়ির মতো পুরনিগম এলাকাতেও বিপুল ভোটে এগিয়ে পদ্মশিবির। গ্রামাঞ্চলের সমর্থন তৃণমূলের পক্ষে থাকলেও শহরাঞ্চলের ভোটে ধস নেমেছে। যা ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’ বলেই মানছেন শাসকদলের নেতারা। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতেছিল বিজেপি। এ বারের লোকসভা ভোটের ফলাফল বিধানসভাওয়াড়ি বিচার করলে দেখা যাচ্ছে, ৯২টি কেন্দ্রে বিধানসভায় এগিয়ে রয়েছে পদ্মশিবির। সেটিও তৃণমূলের কাছে ভাবনার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, ভোটের পরেই প্রশাসনিক স্তরে ঝাঁকুনি দেওয়া শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত আট দিনে অন্তত পাঁচটি বৈঠক করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবারেও আবার তাঁর প্রশাসনিক বৈঠক রয়েছে।
নিয়োগের সিদ্ধান্ত
রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে ৫৫২টি নতুন পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। বুধবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, স্কুলশিক্ষা দফতরে ৩৫ জন, প্রাণীসম্পদ দফতরে ২৭০ জন এবং স্বরাষ্ট্র দফতরে ১০৫ জনকে নতুন নিয়োগ করা হবে। বাকি শূন্যপদে নিয়োগ হবে অন্যান্য সরকারি দফতরে।
বিদ্যুৎচালিত যানে কর ছাড়
বিদ্যুৎচালিত গাড়ি কিনলে কর এবং নথিভুক্তিকরণের (রেজিস্ট্রেশন) ক্ষেত্রে আরও এক বছর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে। ২০২২ সালে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি কিনলে দু’বছর কর এবং নথিভুক্তিকরণে ছাড় দেওয়া হবে। তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরেই। বুধবার সেই মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য মন্ত্রিসভা।
১ জুলাই অর্ধদিবস ছুটি
১ জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন। ওই দিনটি ‘চিকিৎসক দিবস’ হিসেবেও পালিত হয়। বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বিধান রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওই দিন রাজ্য সরকারি দফতরে (জরুরি পরিষেবা ছাড়া) অর্ধদিবস ছুটি থাকবে।