ফাইল চিত্র।
ভোটের দিন বিভিন্ন ঘটনায় সরগরম ছিল কামারহাটি। বহিরাগতদের রুখতে স্থানীয়দের প্রতিরোধ, খোদ তৃণমূল প্রার্থীর অন্তরালে যাওয়া এবং বোমাবাজির মতো বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সোমবার শাসকদলের স্থানীয় স্তরে চলল কাটাছেঁড়া। তাতে অধিকাংশ নেতাই বিরক্ত বলে সূত্রের খবর। তাঁদের মতে, অবাঞ্ছিত ওই সমস্ত ঘটনা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।
রবিবার কামারহাটির ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন শাসকদলের প্রার্থীরা। বাদ যাননি বিক্ষুব্ধ নেতা, অর্থাৎ নির্দলেরাও। যার জেরে কয়েকটি ওয়ার্ডে চেনা থেকে অচেনা মুখই ছিল বেশি। এক প্রার্থীর কথায়, “কাজ করলে, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে আর কিছুরই দরকার হয় না। কিন্তু দলের কেউ কেউ যা করলেন, তাতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা গেল।” উঠেছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথাও। ২৯ নম্বরের তৃণমূল প্রার্থী নির্মলা রাই বলেন, “মনে হচ্ছে, আমাদের দলের একাংশ সিপিএম ও বিজেপির সঙ্গে চক্রান্ত করে গোলমাল করল। ভোটটা ভাল ভাবে করাতে পারিনি। শিক্ষিত লোকজন ভোট দিতে পারেননি।” ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধেই বহিরাগতদের আনার অভিযোগে তুলে একদল যুবককে বেধড়ক পিটিয়ে গাড়ি উল্টে দিয়েছিলেন স্থানীয় লোকজন। তৃণমূলের অন্দরের ময়না-তদন্তে উঠে এসেছে, কর্মীদের প্রার্থী অপছন্দ হওয়ার ফলেই এত গন্ডগোল।
সূত্রের খবর, তিনি যে ২৯ নম্বরে প্রার্থী হতে পারেন, তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে থেকেই তা বলছিলেন ১১ নম্বরের বাসিন্দা তথা বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ নির্মলা। তাতে আপত্তি ছিল স্থানীয় কর্মীদের। প্রার্থী হওয়ার পরে তাঁর আচরণও মানুষ মেনে নেননি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “ওই ওয়ার্ডে নির্মলার কোনও সংগঠনই নেই। তাই বাইরের লোকজনই ভরসা ছিল।” অভিযোগ উড়িয়ে নির্মলা বলছেন, “খাবার, জল ছিল না। তাই দাদাকে (মদন মিত্র) জানাতে উনি সেগুলি পাঠান। ওই ছেলেদেরই বহিরাগত বলা হচ্ছে।”
তাঁদের দলের কেউ এতে নেই, এমনকি, পুরনো তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্মলা যে অভিযোগ করছেন, তা-ও অসত্য বলে দাবি সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ মজুমদারের। তাঁর কথায়, “২০২১-এ বিজেপি, পরে আবার তৃণমূলে আসা লোকজনকে নিয়ে চলছিলেন নির্মলা। পুরনোরা তা মানেননি। বহিরাগত দিয়ে ভোট লুটের প্রতিরোধ করেছেন স্থানীয় মানুষ। সিপিএম বা অন্য দলকে ভোট দিতে পারবেন না বলে পুরনো তৃণমূল কর্মীরা বুথেই আসেননি।’’
চর্চায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডও। তৃণমূল প্রার্থী সুশান্ত রায় চিকিৎসার কারণে বাড়ি ছেড়েছেন। সেই জায়গা নিয়েছিল জোড়া পাতা। এ দিনও এলাকাবাসী বললেন, “প্রথম থেকেই তো তৃণমূল বেপাত্তা। তা হলে বুঝুন, ভোটের দিন কী হয়েছে!” এই ঘটনার নেপথ্যে কাউকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি রয়েছে বলেই দলের পর্যবেক্ষণ। এক প্রবীণ নেতার কথায়, “ভাল হল না খারাপ, তা সময় বলবে।”
এক থেকে সাত নম্বরের মধ্যে যেগুলিতে নির্দল-কাঁটা রয়েছে, সেখানেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই বোমাবাজি, সংঘর্ষ হয়েছে বলে চলছে আলোচনা। এক নেতার কথায়, “কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপের মাসুল না দিতে হয় দু’-তিনটি ওয়ার্ডকে।”