Mamata Banerjee

পায়ে ব্যান্ডেজ, ওটি-র পর বাড়িতে ফিরে গেলেন,বাকি ভোটপর্বে কি গৃহবন্দি হয়ে কাটাবেন মমতা?

বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দুপুরে হেঁটেই ঢোকেন হাসপাতালে। যদিও সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন। সন্ধ্যায় যখন হাসপাতাল থেকে মমতা বেরোন, তখন তিনি হুইলচেয়ারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ২৩:২১
Share:

অস্ত্রোপচারের পর এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

পায়ের অস্ত্রোপচার করিয়ে চিকিৎসকদের কথা না শুনেই বাড়ি ফিরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু হাসপাতালে না থাকলেও তাঁকে কড়া নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, মমতার পায়ের লিগামেন্ট অর্থাৎ পেশিতন্তুর আঘাত সারাতে অস্ত্রোপচার (সার্জিকাল প্রসিডিওর) করতে হয়েছে। তাই আপাতত হাঁটাচলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে তাঁকে। পাশাপাশি, বিশ্রামেও থাকতে হবে। কতটা বিশ্রাম, তা স্পষ্ট করেননি চিকিৎসকেরা। কত দিনের বিশ্রাম তা-ও জানাতে চাননি। এক চিকিৎসককে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ ভাবে আগে থেকে বলা যায় না কি কত দিনের বিশ্রাম প্রয়োজন!’’ কিন্তু এই অনিশ্চয়তার জন্য আরও একটি বিষয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তা হল, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট চলাকালীন মমতার উপস্থিতি, রাজ্যের শাসকদলের সর্বময় নেত্রীর ‘সহজলভ্যতা’। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ভোটপর্বে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই বন্দি থাকতে হবে নেত্রীকে?

Advertisement

পরশু অর্থাৎ শনিবার পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে পায়ের অস্ত্রোপচারের জন্য বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। দুপুরে হেঁটেই ঢোকেন হাসপাতালে। যদিও সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন তিনি। কিন্তু সন্ধ্যায় যখন হাসপাতাল থেকে মমতা বেরোন, তখন তিনি হুইলচেয়ারে। উডবার্ন ব্লকের সামনেই দাঁড়িয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। হুইলচেয়ার ছেড়ে সেই গাড়িতে উঠতে কিছুটা অসুবিধাতেই পড়তে দেখা যায় মমতাকে। ব্যান্ডেজ বাঁধা পা সম্ভবত প্লাস্টারেই মোড়া ছিল। সেই পা নিয়ে তিনি হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেও গাড়ির পা-দানিতে পা রাখতে পারছিলেন না। অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে দেখা যায় এগিয়ে এসে হাত ধরে সাহায্য করতে। অভিষেকের সাহায্য নিয়ে মমতা গাড়ির সামনের আসনে উঠে বসেন।

কী কারণে অস্ত্রোপচার?

Advertisement

গত ২৭ জুন উত্তরবঙ্গে হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণের সময়ে বাঁ পা এবং কোমরে চোট পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিনই তাঁকে তড়িঘড়ি এসএসকেএমে আনা হয়েছিল। পরে ফিজ়িক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক এবং রেডিয়োলজির প্রধান চিকিৎসক অর্চনা সিংহের তত্ত্বাবধানে মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসা শুরু হয়। এমআরআই-এ দেখা যায়, বাঁ হাঁটুর লিগামেন্ট এবং হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টে চোট রয়েছে। বাঁ হাঁটুতে জল জমার চিহ্নও রয়েছে। কিন্তু সে দিন চিকিৎসকেরা হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরামর্শ দিলেও সেই প্রস্তাবে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং, তিনি বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু বাড়িতে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করার পরও চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, লিগামেন্টের চোটের সমস্যা দূর করতে অস্ত্রোপচার (প্রসিডিওর) করার প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রস্তাবে রাজি হন।

বৃহস্পতিবার যা হল

বৃহস্পতিবার দুপুরে এসএসকেএমে পায়ের সার্জিকাল প্রসিডিওরের জন্য এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে সিটি স্ক্যান করা হয়। পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকের সাড়ে ১২ নম্বর ঘরে। মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের পেশিতে আঘাতের চিকিৎসার জন্য সার্জিকাল প্রসিডিওর করা হয় সেখানে।

অভিষেক আসেন হাসপাতালে

তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাসপাতালে এসেছিলেন অভিষেক। তার আগে কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে তৃণমূলের তরফে সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে সরাসরি চলে আসেন এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকে।

চিকিৎসকেরা যা বললেন

সন্ধে ৭টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে বেরোন চিকিৎসকেরা। মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের আঘাত এবং অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের পেশিতে আঘাতের চিকিৎসার জন্য একটি সার্জিকাল প্রসিডিওর করা হয়েছে। সেই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁকে হাসপাতালেই থেকে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল। যাতে চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান, তিনি বাড়ি ফিরতে চান। তাঁর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাড়িতে থাকলেও বেশ কিছু নিয়ম এবং বিধিনিষেধ মেনে থাকতে হবে তাঁকে।

পঞ্চায়েত ভোট এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্রাম

যেহেতু শনিবার পঞ্চায়েত ভোট, তাই চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীকে কত দিন বিশ্রামে থাকতে হবে? চিকিৎসকেরা জানান, এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত সংবাদ মাধ্যম এর পর জানতে চান এক সপ্তাহ, দু’ সপ্তাহ আনুমানিক একটা সময় তো বলতে পারবেন নিশ্চয়ই চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, ‘‘এ ভাবে কিছুই বলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি দেখে বিশ্রামের দিন ঠিক হয়। এ ভাবে আগে থেকে বলা যায় না বিশ্রামের সময়।’’ তবে হুইল চেয়ারে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, আগামী দু’দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রী স্বাভাবিক হাঁটাচলায় ফিরতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোট পর্বটি হয়তো গৃহবন্দি হয়েই কাটবে তাঁর। যদিও চিকিৎসকেরা এ-ও স্পষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রীর হাঁটাচলায় কতটা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আপাতত তাঁকে হুইলচেয়ারের উপরেই নির্ভর করতে হবে কি না, সে কথাও জানানো হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement