প্রতীকী ছবি।
শুধু পরের পর কল্যাণ প্রকল্প চালু করলেই হবে না। চাই তার লাগাতার প্রচার, যাতে প্রকল্পের সুবিধা প্রকৃত উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছয়। সেই সঙ্গে চাই মেয়েদের আরও কাজ আর প্রকল্পের উপরে নজরদারি। সামাজিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করে এই মর্মে রিপোর্ট দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে রাজ্য সরকারকে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস আগেই দিয়েছিল তারা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কল্যাণ প্রকল্পের ‘সোশ্যাল অডিট’ বা সামাজিক সমীক্ষার সুপারিশও করা হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টে।
রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরেই সমাজকল্যাণ খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বরাদ্দ করে চলেছে। দুর্বল অংশের মানুষকে সহযোগিতা করতে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে প্রায় ৪০০টি কর্মসূচি চালাচ্ছে তারা। বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে মহিলাদের ক্ষমতায়নে। সরকার যে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বয়স্কা, স্বামীহারা, তফসিলি জাতি-জনজাতি, বয়ঃসন্ধির মেয়েদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে, সেটা বিশ্বব্যাঙ্কের নজর এড়ায়নি। তাই মহিলাদের ক্ষমতায়ন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে রাজ্যকে প্রায় ১২.৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে তারা। সমান্তরাল ভাবে ‘জয় বাংলা’র অভিন্ন মাধ্যমে সব কর্মসূচি চালানোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে রাজ্য। এর ফলে একটি পোর্টালের মাধ্যমে নিজের উপযুক্ত প্রকল্প বাছাইয়ের সুবিধা পাবেন উপভোক্তা।
সামাজিক প্রকল্পকে আরও বেশি কার্যকর করতে প্রকল্পগুলির যথাযথ প্রচার প্রয়োজন বলে মনে করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। এখন প্রকল্পের খবর পৌঁছচ্ছে সীমিত সংখ্যক যোগ্য উপভোক্তার কাছে। যোগ্য উপভোক্তা ও সামাজিক সংগঠনকে সচেতন করার জন্য সরকারি দফতরগুলিকেই যথাযথ প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, মহিলাদের ক্ষমতায়নে শুধু উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালেই চলবে না। মেয়েদের কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে সমান্তরাল ভাবে। তাঁদের কারিগরি দক্ষতা, আর্থিক ও ডিজিটাল জ্ঞান, আয়, দৈনন্দিন জীবনযাপনের মানোন্নয়ন সম্পর্কে আরও বেশি করে বোঝাতে হবে। সেই দায়িত্ব নিতে হবে মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কর্মরত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। তবেই মহিলাদের জন্য আরও আরও বেশি করে কাজের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের আর্থিক পরিস্থিতি সুবিধার নয়। কোভিডের দীর্ঘমেয়াদি দাপটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজ্যের অর্থনীতিতেও। অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে ঠিকই, তবে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। অনেক অর্থনীতিবিদের পরামর্শ, অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে সামাজিক ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ানো যুক্তিযুক্ত। মানুষের হাতে নগদ টাকা পৌঁছে দিতে পারলে তা অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে যোগ্য উপভোক্তা নির্বাচন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় একই ইঙ্গিত করে বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শ, ‘সোশ্যাল অডিট’ করা গেলে সব দিক থেকে তা সহায়ক হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাধীন নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে নজরদারি চালানো, কার্যকারিতা বাড়াতে টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইউনিটের সহযোগিতা নেওয়া জরুরি। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এতে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকল্প পরিচালনা সহজ হবে।
বিভিন্ন ধরনের পেনশন প্রকল্প ছাড়াও রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বৃত্তি প্রকল্প, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, পড়ুয়াদের ঋণ-কার্ডের মতো বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, বিশ্বব্যাঙ্কের সুপারিশ মেনে পদক্ষেপ করা গেলে এক দিকে যেমন প্রকল্পগুলির নিবিড় প্রয়োগ সম্ভব, তেমনই যোগ্য উপভোক্তাদের হাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে।