সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত গীতশ্রী। নিজস্ব চিত্র।
বহু বছর চেষ্টার পরেও জোটেনি সরকারি চাকরি। ৫৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তীর্ণ হয়েছিলেন গীতশ্রী মান্না। বেসরকারি চাকরিও পাননি। তাই এখন হাঁস-মুরগি পালন করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
ন্যাজাটের বাসিন্দা ৩৭ বছরের গীতশ্রী মাধ্যমিকে ৬২ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের কানপুরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ছত্রপতি শাহুজি মহারাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল নিয়ে এমএ পাশ করেন ২০০৭ সালে। বাবা স্কুলশিক্ষক ছিলেন। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে পড়াশোনা চালাতে আর্থিক সমস্যা হয়নি মেয়ের।
২০০৭ সালের পর থেকে শুরু হয় চাকরির পরীক্ষায় বসা। গীতশ্রী জানালেন, তিন বার এসএসসি দিয়েছিলেন। একাধিক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি গ্রুপ সি ও ডি স্তরের পরীক্ষাও দেন। কিন্তু চাকরি অধরাই থেকে গিয়েছে। এখন বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় অনেক সরকারি পরীক্ষায় বসতে পারেন না। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ গীতশ্রী। সরকারি চাকরির আশায়, সম্প্রতি ইন্টিগ্রেটেড চাইন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট (আইসিডিএস) সুপারভাইজার পদের পরীক্ষাও দিয়েছেন তিনি। গীতশ্রী জানালেন, ২০১০ সালে বিয়ে হয়েছিল ন্যাজাট এলাকাতেই। স্বামী কলকাতার একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্মী ছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে সেই কাজ চলে গিয়েছে।
দু’জনের সংসার চালাতে এখন হিমশিম অবস্থা। চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি পাশাপাশি সংসারের খরচ সামলাতে কিছুদিন ধরে হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করছেন গীতশ্রী। এ ছাড়া, একটি সংগঠনের দান করা সেলাই মেশিন পেয়ে ছোটখাটো কাজও করেন। তাতে মাসে ১৫০০ টাকার বেশি আয় হয় না। হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করেও সংসার চালানো শক্ত হয়ে উঠেছে। গীতশ্রী বলেন, “এখন সংসারের পরিস্থিতি দেখে আয়ের পথ না পেয়ে কয়েক দিন হল ১০০ দিনের কাজের জন্য জব কার্ডের আবেদন করেছি। জব কার্ড হয়ে গেলে আমি ও স্বামী দু’জনেই মাটি কাটার কাজ করব। লজ্জা করলে তো পেট চলবে না।’’ হতাশ গলায় গীতশ্রী আরও বললেন, “মাঝে মাঝে মনে হয়, আর চাকরির চেষ্টা করব না। এত দূর পড়াশোনা করে লাভ কী হল বুঝতে পারি না।”
সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “মহিলাদের স্বনির্ভর করতে সরকারি যে সব সুবিধা আছে তার মধ্যে ওঁর জন্য যেটা উপযুক্ত, উনি চাইলে তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”