মহিলা পুলিশের কড়া পাহারায় কুণাল ঘোষ। ছবি: শৌভিক দে।
‘হা-রে-রে-রে’ চিৎকার থেকে শুরু করে ‘দমদম দাওয়াই’— অনেক কিছুই করেছে পুলিশ। জেলবন্দি সাংসদ কুণাল ঘোষ যাতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কোনও ভাবে কথা বলতে না-পারেন, সেই জন্যই এত আয়োজন। কিন্তু এত কাণ্ড করেও দমানো যায়নি তাঁকে।
তবে মঙ্গলবার বিধাননগর পুলিশের নয়া দাওয়াইয়ে কাজ হয়েছে কিছুটা। হার মেনেছেন কুণালও।
এ দিন সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি মামলার শুনানি ছিল বিধাননগর আদালতে। শুনানির পরে আদালত থেকে বেরোনোর পথে কুণাল তৈরি ছিলেন কিছু বলার জন্য। সাংবাদিকেরাও তখন অপেক্ষায়। তখনই মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেল মহিলা পুলিশের একটি দল। কার্যত ‘প্রমীলা ব্যারিকেড’ তৈরি করে সাংসদকে ঘিরে ফেলল দলটি। কুণাল সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে পারলেন না। সাংবাদিকদের অবস্থাও তা-ই। প্রিজন ভ্যানে ওঠার আগে সামান্য কিছু কথা বলা ছাড়া কার্যত হাল ছেড়ে দিলেন কুণাল।
এক পুলিশ আধিকারিক মৃদু হেসে বলেই ফেললেন, ‘‘যাক, এ বার অন্তত মুখ বন্ধ করা গেল!’’
আগের হাজিরার দিন বিধাননগর আদালত চত্বরে কুণালকে বাগে আনতে পারছিল না পুলিশ। এক মহিলা পুলিশ আধিকারিকই সে-বার কুণালকে জাপটে ধরে, ঠেলে প্রিজন ভ্যানে বসিয়ে দেন। সেই দৃষ্টান্ত থেকেই এ দিন এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশের একাংশ।
পুলিশ অবশ্য সরকারি ভাবে তবে এটাকে কৌশল বলতে রাজি নয়। এক পুলিশকর্তার দাবি, ঘটনাচক্রে আদালতে নিরাপত্তা দেখার ভার ন্যস্ত ছিল এক মহিলা আধিকারিকের উপরে। কিন্তু সেটা মোটেই কোনও কৌশল বা আগাম পরিকল্পনা নয়। তবে বিধাননগর আদালতে পুলিশি হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন কুণাল। তাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যাঁর বিরুদ্ধে, বিতর্ক এড়াতে সেই পুলিশ অফিসারকে এ দিন কুণালের ধারেকাছে দেখা যায়নি।
মহিলা পুলিশের বেষ্টনীতে তাঁর কণ্ঠস্বর অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। তবে কুণাল যে এ দিন একেবারেই কিছু বলেননি, তা নয়। আদালতের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘আগামী ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে সারদা কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে আমি আমার মতো পদক্ষেপ করব।’’
আদালতে কুণালকে ঘিরে পুলিশের ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে সিবিআইয়ের রিপোর্ট নিয়েও ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে। আদালত সূত্রের খবর, সিবিআই এ দিন বিধাননগর আদালতে জানিয়ে দিয়েছে, সারদা কাণ্ডে যে-সব মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে, তারা আর সেগুলোর দায়িত্ব নিচ্ছে না। সেগুলি শেষ করবে রাজ্য পুলিশই।
এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুণালের আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা। এ দিন আদালতের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘তা হলে তো সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কোনও মানেই থাকল না। আইনগত দিক থেকেই বিষয়টি আমরা দেখব।’’
প্যারোলের আর্জি
বারবার আবেদন জানিয়েও জামিন মেলেনি। এই অবস্থায় সংসদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে দু’দিন প্যারোলে মুক্তির আর্জি জানালেন কুণাল। এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের এজলাসে কুণালের হয়ে ওই আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী।
অয়নবাবু জানান, রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেল কুণালকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়, ২১ জুলাই সংসদের অধিবেশনে সাংসদ হিসেবে তাঁকে উপস্থিত থাকতে হবে। তাঁর মক্কেল যাতে সংসদে হাজির থাকতে পারেন, সেই জন্য তাঁকে দু’দিন প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হোক। আদালত নির্দেশ দিলে কুণাল ২১ জুলাই বিমানে দিল্লি যাবেন এবং পরের দিন ফিরবেন। ১৬ জুলাই প্যারোলে মুক্তির আবেদন শুনবেন।