—ফাইল চিত্র।
লাগাতার হুমকি দিচ্ছেন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির লোকেরা! এই অভিযোগ তুলে নিরাপত্তার দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে গেলেন আইএসএফের একমাত্র বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা তরুণী। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন নওশাদের আইনজীবী। উচ্চ আদালতে তিনি দাবি করেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধে নওশাদের লড়ার কথা রয়েছে বলেই এই ধরনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এই মামলায় আদালত জানিয়ে দিয়েছে, তারা এ বিষয়ে ঢুকতে চায় না। তরুণীকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে হাই কোর্ট।
সম্প্রতি ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন মুর্শিদাবাদের এক তরুণী। সেই মামলায় অন্তর্বর্তী জামিনে রয়েছেন বিধায়ক। বুধবার অভিযোগকারিণী আদালতে গিয়ে জানিয়েছেন, তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দু’জন মোটরবাইকে করে এসে প্রায়ই হুমকি দেন, ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য। তরুণীর দাবি, এ বিষয়ে তিনি রাজ্য সরকারকেও অবহিত করেছেন। কিন্তু সরকারের তরফে এখনও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা চেয়েই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তরুণীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে নওশাদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল বর্তমানে অন্তর্বর্তী জামিনে রয়েছেন। তা যাতে আদালতে প্রত্যাহার করে নেয়, সেই জন্যই এ ধরনের অসত্য অভিযোগ তোলা হচ্ছে। নওশাদের আইনজীবীর এ-ও দাবি, আসন্ন লোকসভা ভোটে শাসকদলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার বিরুদ্ধে নওশাদের প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে। সেই জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
এই মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, আদালত এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না। অভিযোগকারিণীকে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে আবেদন জানাতে বলেছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার যদি মনে করে নিরাপত্তা দেওয়া উচিত, দিতে পারে। আদালত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না জানিয়ে মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে একাধিক বার ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন নওশাদ আইএসএফ বিধায়ক। কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে অন্যতম বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে তাঁর দল আইএসএফ। নওশাদের নেতৃত্বে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই এলাকায় তো বটেই, অন্য জেলার আরও কিছু সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত অঞ্চলে আইএসএফের লড়াই নজর কেড়েছে। বিধায়ক নওশাদ গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছেন, তাতে সরকার-বিরোধী লড়াইয়ে তাঁর পরিচিতি আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতেই নওশাদ ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চাইছেন। ওই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটারের অনুপাত উল্লেখযোগ্য। সব মিলিয়ে নওশাদকে সামনে রেখে বাম-কংগ্রেস এবং আইএসএফ একত্রে দাঁড়ালে লড়াই ভাল হবে বলেই অনেকের মত। নওশাদের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ভোটের আগেই বিধায়ককের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এ সব অভিযোগ করা হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, পঞ্চায়েত ভোটের তিন দিন আগে নিউ টাউন থানায় নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। তরুণীর অভিযোগ, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে একটি অফিসে নওশাদ তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। তার পরে একাধিক বার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেন বলে দাবি তাঁর। অভিযোগকারিণী এবং তাঁর ভাই গিয়ে নিউ টাউন থানায় নওশাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে শোনা যায়, ওই তরুণী মুর্শিদাবাদে শাসক তৃণমূলের এক নেত্রীও বটে। দলের তরফে তিনি রেশন ডিলারদের সংগঠন দেখাশোনা করতেন। তাঁর তোলা অভিযোগকে গোড়া থেকেই অস্বীকার করে এসেছেন নওশাদ। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার এবং শাসকদল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই কখনও খুনের চেষ্টা, কখনও অস্ত্রসমেত খুন— বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হচ্ছে। ওই ধর্ষণের মামলাতেই নওশাদকে শর্তসাপেক্ষে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়ে রেখেছে হাই কোর্ট।