Cockroaches in Train

এসি কোচে আরশোলার সংসার! সরব হয়ে রেলকে ক্ষমা চাওয়ালেন বাংলার মেয়ে, সমাধান হবে কি?

ঐন্দ্রিলার অভিযোগ, কামরার দায়িত্বে থাকা রেলের কর্মীরা তাঁকে জানান, কমপ্লেন বুক বলে কিছু হয় না। অনেক দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ জানাতে হলে অনলাইনে জানাতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:০৭
Share:

হাওড়া-গয়া এক্সপ্রেসে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার সোদপুরের তরুণী ঐন্দ্রিলা দাস। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

হাওড়া থেকে গয়া যাচ্ছিলেন এক তরুণী। ট্রেনের এসি কামরায় উঠে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হতে হল তাঁকে। উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের বাসিন্দা ওই তরুণীর নাম ঐন্দ্রিলা দাস। ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন। টলিউডে বেশ কিছু কাজও করেছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে হাওড়া থেকে ১৩০২৩ হাওড়া-গয়া এক্সপ্রেসে উঠে বসেছিলেন তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের কোচ নম্বর ছিল এসি বি ২। আনন্দবাজার অনলাইনকে ঐন্দ্রিলা বলেন, “আমরা যে যার সিটে গিয়ে বসে পড়েছিলাম। ৪৯-৫৪ ছিল আমাদের সিট সংখ্যা। হাওড়া ছেড়ে ট্রেন তখন বেশ গতিতে ছুটছে। আধ ঘণ্টা পর হঠাৎ দেখলাম আমাদের সিটের নীচ থেকে দু’একটা আরশোলা বেরিয়ে এল।”

আরশোলাগুলিকে তাড়ানোর চেষ্টা করতেই সেগুলি ফোকরে ঢুকে পড়ে। এসি কামরায় এত টাকা ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন, অথচ আরশোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে— এমন একটা পরিস্থিতিতে বেশ বিরক্তই হয়েছিলেন সোদপুরের তরুণী। রাগও হচ্ছিল বেশ। তাই আর দেরি না করে কামরার দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজ়ারকে ডেকে বিষয়টি দেখান তিনি। ঐন্দ্রিলা জানিয়েছেন, এর পর সুপারভাইজ়ার একটি কীটনাশক স্প্রে নিয়ে এসে ছড়িয়ে দেন। ভেবেছিলেন, হয়তো আরশোলার হাত থেকে রেহাই মিলল। কিন্তু পরে যে আরও ভয়ানক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে তা কল্পনা করতে পারেননি। ঐন্দ্রিলার দাবি, কিছু ক্ষণ পরেই আবার ফাঁকফোকর দিয়ে আসনের নীচ থেকে পিল পিল করে আরশোলা বেরিয়ে আসতে শুরু করে। গায়ে উঠে পড়ছিল, খাবারে গিয়ে পড়ছিল। একেবারে ভয়াবহ পরিস্থিতি।

Advertisement

তাঁর কথায়, “আবারও সুপারভাইজ়ারের কাছে ছুটলাম। রাত তখন ১০টা। সুপারভাইজ়ারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কামরাগুলিতে পেস্ট কন্ট্রোল করা হয় না? তখন তিনি বলেন, পেস্ট কন্ট্রোলের টেন্ডার শেষ হয়ে গিয়েছে। এর পরই তাঁকে বললাম, কমপ্লেন বুক দিন। আমি লিখিত অভিযোগ জানাব। কিন্তু তিনি আমায় বলেন, কমপ্লেন বুক তাঁর কাছে নেই। ওটা গার্ডের কাছে রয়েছে।” এ কথা শুনে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।

শুধু তাই-ই নয়, তাঁকে বলা হয়েছিল, যদি অভিযোগ জানাতে হয়, তা হলে অনলাইনে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ঐন্দ্রিলার প্রশ্ন, “আমি যদি লিখিত অভিযোগ জানাতে চাই, তা হলে কমপ্লেন বুক পাব না কেন? সেই কমপ্লেন বুক কামরার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে না থেকে গার্ডের কাছে কেন থাকবে?” যদিও এ প্রশ্নের সদুত্তর তিনি পাননি বলেই দাবি করেছেন সোদপুরের তরুণী।

ঐন্দ্রিলার অভিযোগ, কামরার দায়িত্বে থাকা রেলের কর্মীরা তাঁকে জানান, কমপ্লেন বুক বলে কিছু হয় না। অনেক দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ জানাতে হলে অনলাইনে জানাতে হবে। এর পর টিকিট পরীক্ষকের (টিটিই) কাছেও বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন তিনি। টিকিট পরীক্ষকও তাঁকে একই কথা বলেন। ঐন্দ্রিলা এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি এর আগে রাজধানী এক্সপ্রেসেও যাতায়াত করেছি। আমি দেখেছি, কমপ্লেন বুক ইনচার্জের কাছে থাকে। কিন্তু এই ট্রেনে ইনচার্জ বলে কেউই ছিলেন না। শুধু এক জন সুপারভাইজ়ার ছিলেন। সুপারভাইজ়ার আমাকে আশ্বস্ত করেন, যখন বড় কোনও স্টেশন আসবে, আমাকে কমপ্লেন বুক দেওয়া হবে।”

এ ভাবে রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত কেটে যায়। ভাগলপুর স্টেশনে ট্রেন পৌঁছলে তাঁকে কমপ্লেন বুক দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, “যে কমপ্লেন বুক আমাকে দেওয়া হয়েছিল, সেটা দেখে মনেই হচ্ছিল বহু দিনের পুরনো, খুব একটা ব্যবহার হয় না। পাতাগুলি হলুদ হয়ে গিয়েছিল।” এ তো গেল সারা রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা। ঐন্দ্রিলা বলেন, “আমাদের কামরা দেখে বুঝতে পারছিলাম না, আমরা এসি কামরায় আছি না জেনারেল কামরায়! এসি কামরায় টিকিট ছাড়াই দিব্যি লোকজন যাতায়াত করছেন। দরজার সামনে, ওয়াশরুমের সামনে কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছেন।” পুলিশ এবং টিটিই এই বিষয়টি নিয়ে নাকি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। যাত্রীদেরও নাকি সাবধান করে দেন।

ঐন্দ্রিলার প্রশ্ন, “যে ভাবে যত্রতত্র রিজার্ভেশন কামরায় লোক উঠে পড়ছে, এতে তো নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। কারও কিছু হয়ে গেলে তার দায় কি রেল কর্তৃপক্ষ নেবেন?” এর পরই ঐন্দ্রিলা সেই ঘটনার একটি ভিডিয়ো তুলে রেল মন্ত্রককে ট্যাগ করে একটি টুইট করেন। তিনি লেখেন, “বি ২ এসি কামরায় সাধারণ যাত্রীরা যত্রতত্র উঠে পড়ছেন। কোনও পুলিশ নেই, টিটিই-ও নেই। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? এর দায় কে নেবে?” সোদপুরের তরুণীর প্রশ্ন, এত টাকা দিয়ে টিকিট কেটেও এই ধরনের পরিষেবা ভাবাই যায় না।

তাঁর আরও অভিযোগ, অনলাইনে যখন অভিযোগ জানিয়েছেন, তৎক্ষণাৎ উত্তর পেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু যে গ্রাউন্ড স্টাফদের সেই সমস্যা সমাধানে পাঠানো হয়েছিল, তাঁরা আগেও এসেছিলেন। যে গ্রাউন্ড স্টাফদের তিনি সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছিলেন, অনলাইনে অভিযোগ জানানোর পরে সেই গ্রাউন্ড স্টাফদেরই আবার সমস্যা সমাধানে পাঠানো হয়! ঐন্দ্রিলার আরও দাবি, ১৭ ঘণ্টার এই ট্রেনে একটা প্যান্ট্রি কারও নেই। তাঁর কথায়, “এত দীর্ঘ সময়ের সফরে কোনও প্যান্ট্রি কার নেই, এটা তো ভাবাই যায় না। তাই আমার দাবি, এই ট্রেনে যেন প্যান্ট্রি কারেরও ব্যবস্থা করা হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement