মাথা ঠেসে ধরে চলছে মারধর। বসিরহাটে। নির্মল বসু
বিদ্যুতের খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বেঁধে এক মহিলাকে পেটাচ্ছে জনতা। চিৎকার করে কাঁদছেন মহিলা। ছেড়ে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করছেন। কিন্তু সে কথায় জনতা কর্ণপাত করলে তো হয়! ঘিরে ধরে গোটা দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে যারা, তারা মাঝে মধ্যে হাহুতাশ করে দু’টো শব্দ বললেও অত্যাচার থামাতে এগিয়ে যাচ্ছে না কেউই। পরে অবশ্য পুলিশ গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে।
স্রেফ সন্দেহের বশে বৃহস্পতিবার সকালে মহিলাকে এ ভাবে মারধরের ঘটনা ঘটেছে বসিরহাট থানার ভ্যাবলা স্টেশনের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার বিরুদ্ধে কাপড় চুরির অভিযোগ তুলেছে কেউ কেউ। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে যারা আইন হাতে তুলে নিয়ে মারধর করল, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসনাবাদের বাসিন্দা ওই মহিলার অবশ্য দাবি, তিনি নির্দোষ। জামাকাপড় কিনতে এসে আক্রান্ত হয়েছেন।
ভ্যাবলা স্টেশন বাজারে প্রায়ই ছোটখাট চুরি হচ্ছিল। মাস দু’য়েক আগেও কাপড় চুরির অভিযোগে দুই মহিলাকে মারধর করা হয়েছিল। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। আরও কয়েকবার ওই বাজারে জামা-কাপড় চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ ওই মহিলা কাপড় চুরি করেছেন বলে রটে যায়। দড়ি দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মারধর শুরু করে কিছু লোক। মহিলার কথায়, ‘‘আমরা খুব গরিব। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সংসার চালাতে আমি বাড়ি বাড়ি কাপড় বিক্রি করি। সকাল সকাল বেরিয়ে সস্তায় কাপড় কিনতে ভ্যাবলায় পাইকারি বাজারে এসেছিলাম। একটা দোকানে কাপড়ের দরদাম করছিলাম।’’ মহিলার দাবি, সে সময়ে পাশের দোকান থেকে হঠাৎ শোরগোল ওঠে, কাপড় চুরি হয়েছে। লোক জড়ো হয়ে যায়। মহিলাকে সামনে পেয়ে তাঁর উপরেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে। কথা বলার সুযোগটুকু না দিয়ে শুরু হয় মারধর।
দোষ প্রমাণের আগেই কাউকে অপরাধী ঠাহরে নেওয়া ভাল চোখে দেখছেন না স্থানীয় বহু মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা শান্তি হালদার বলেন, ‘‘এ ভাবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। দোষ করে থাকলে পুলিশে অভিযোগ করলেই হত।’’ কিছু ব্যবসায়ীও বিষয়টির প্রতিবাদ করেছেন। তাঁরা জানান, এ ভাবে কোনও মহিলাকে মারধর করাটা অন্যায়। ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।