হাতেগোনা কিছু যাত্রী বিমানবন্দরে। ছবি: পিটিআই।
সারা দিনে সাকুল্যে ছ’টি উড়ান। যাওয়া-আসা মিলিয়ে যাত্রী ৬৪৬ জন। তার মধ্যে কলকাতায় এসেছেন ৩৫৩ জন। গিয়েছেন ২৯৩ জন।
হওয়ার কথা ছিল লকডাউন। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে রাজ্য সরকার সেই লকডাউন প্রত্যাহার করলেও শনিবার উড়ান চালায়নি বেসরকারি কোনও সংস্থাই। তাদের যুক্তি ছিল, শেষ মুহূর্তে টিকিট বিক্রি করলেও পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে না। ফলে, সারা দিন যেখানে প্রায় ১৪০টি উড়ানের যাতায়াত করার কথা ছিল, সেখানে যাতায়াত করল মাত্র ছ’টি।
দু’টি উড়ান চালিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। একটি হায়দরাবাদ গিয়েছে সকাল ৮টা নাগাদ। সেখান থেকে ফিরেছে ১০টায়। ফেরার উড়ানে যাত্রী ছিল বেশি। বেঙ্গালুরু থেকে ১১টা নাগাদ শহরে এসে সাড়ে ১২টায় উড়ে গিয়েছে দ্বিতীয় উড়ান। যাতায়াতে ভালই যাত্রী হয়েছে। অ্যালায়েন্স ছোট এটিআর উড়ান চালিয়েছে ঝাড়সুগুড়ায়। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ গিয়ে বিমানটি ফিরেছে বিকেল ৫টায়।
আর এই তিনটি মাত্র উড়ানের জন্য সকাল থেকে হা-পিত্যেশ করে বসে থেকেছেন ট্যাক্সিচালকেরা। অপেক্ষা করেছে ভলভোর ৩২টি বাস। সকালের দু’টি উড়ানের যাত্রীরা যে যাঁর মতো বাড়ি চলে যাওয়ার পরেও নীচে অ্যারাইভ্যালে দেখা গেল, ট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষা করছেন রঞ্জন পাণ্ডে নামে এক চালক। আর তো মাত্র একটি উড়ান বাকি! কত আর যাত্রী পাবেন! রঞ্জন বললেন, “কী করব! আমরা তো বিমানবন্দর থেকেই যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি। সকালে পণ্য বিভাগের দিক থেকে এক জন যাত্রীকে নিয়ে খিদিরপুরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে রাস্তা ফাঁকা। এক জন যাত্রীও পাইনি। খালিই আসতে হল। এখন বিমানবন্দরের কোনও কর্মী যদি ট্যাক্সি নিতে চান, তাই অপেক্ষা করছি।” একা রঞ্জন নন, লাইনে তখন অনেক ট্যাক্সি। সারা দিন বাস ছিল ৩২টি। বাসচালকেরা জানালেন, খালি বাস নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে ভিআইপি রোডে পড়লে তবে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের চালাতে বলা হয়েছে। তাই চালাচ্ছেন।
আজ, রবিবারের উড়ান ধরবেন বলে শনিবার থেকেই কিছু যাত্রীকে বিমানবন্দরের টার্মিনালের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে এ দিনও। তাঁরা সকলেই পেশায় শ্রমিক এবং আগে বিমানে ওঠেননি। যেমন উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে আসা একদল রাজমিস্ত্রি যাবেন পোর্ট ব্লেয়ারে। সেই দলে রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ রাজভড় নামে এক জন। তাঁর নিজের ভাই কাজ করেন পোর্ট ব্লেয়ারে। বালিয়ায় লকডাউনে কাজ নেই। তাই ভাই পোর্ট ব্লেয়ার থেকে বিমানের টিকিট কেটে পাঠিয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, দিনে ৫৫০ টাকা মজুরির কাজ রয়েছে সেখানে। ভাই-ই তাঁকে জানিয়েছেন, ভোরের উড়ান। তাই আগেই যেন ইন্দ্রজিতেরা কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে যান। তাই, শনিবার সকালেই কলকাতায় পৌঁছে যান ছ’জন।
গোয়ায় কাজ করেন ১৮ বছরের বাপ্পা রাজমোল্লা। বালুরঘাটে বাড়ি। জানালেন, বালুরঘাট থেকে দিনে একটি করে বাস ছাড়ছে কলকাতার। ট্রেন নেই। সেই বাস ভোরে এসে পৌঁছচ্ছে। আজ, রবিবার সকালে তাঁর কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুর উড়ান ধরার কথা। সেখান থেকে যাবেন গোয়া। শনিবার রাতের বাস ধরলে রবিবার উড়ান ছাড়ার আগে কলকাতায় পৌঁছতে পারতেন না। তাই শুক্রবার, লকডাউনের রাতেই বাসে চেপে বসেন। এ দিন সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছে ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা বেঙ্গালুরুর উড়ান ধরার।
ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা সিকন্দর মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী কেরলের একটি মন্দিরে কাজ করেন। কাজ বলতে মন্দির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। বছরে আট মাস কাজ, আর বাকি চার মাস ছুটি নিয়ে বাড়িতে। এ বার উল্টো হয়ে গিয়েছে। শেষ আট মাস বাড়িতে বসে ছিলেন। কাজ নেই। কেরলে যোগাযোগ করায় সেখানে যেতে বলা হয়েছে। গাঁটের কড়ি খরচ করে জীবনের প্রথম উড়ান-সফর করতে কলকাতায় পৌঁছেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব দম্পতি। ছেলেমেয়েরা সব বড় হয়ে গিয়েছে। ঝাড়া হাত-পা। চলেছেন কেরলে।