তল্লাশি চলছে অর্জুনের মজদুর ভবনে।—নিজস্ব চিত্র।
ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের তহবিল তছরুপ এবং জালিয়াতির ঘটনায় সরাসরি জুড়ে গেল ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের নাম। বুধবার ব্যারাকপুর আদালতের অনুমতি নিয়ে সাংসদের বাসভবন ও দলীয় কার্যালয় ‘মজদুর ভবন’-এ তল্লাশি চালান ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। গোটা ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন অর্জুন। তবে পুলিশের দাবি, গোটা প্রতারণা এবং তহবিল তছরুপের ঘটনা অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল মজদুর ভবন থেকে।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের কয়েক কোটি টাকা তছরুপ নিয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত করছে গোয়েন্দা বিভাগ। তছরুপের ঘটনার এফআইআরে মূল অভিযুক্ত সঞ্জিৎ ওরফে পাপ্পু সিংহ। তিনি ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের ভাইপো। পুলিশ সূত্রে খবর, এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক কৌশিক ঘোষ আদালতকে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কিত যে তথ্য এখনও পর্যন্ত দিয়েছেন তাতে, জালিয়াতির অঙ্ক একশো কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৬ সাল থেকে ওই জালিয়াতি শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ রয়েছে ভাটপাড়া পুরসভার কয়েকটি তহবিল তছরুপের ঘটনাও। মূল অভিযুক্ত সাংসদের ভাইপো। তবে তদন্তকারীদের দাবি, জালিয়াতির টাকার হদিস করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন সময়েই সেই টাকা সাংসদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: বাবার দেহ আগলে মেয়ে, সরশুনায় রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া
তদন্তকারীদের দাবি, তদন্তের সময় বিভিন্ন যে নথি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেখানে বারে বারে মজদুর ভবনের সরাসরি যোগ উঠে এসেছে। সেই কারণেই তদন্তকারীরা সাংসদের বাসভবন এবং দলীয় কার্যালয় তল্লাশির আবেদন জানান ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। তদন্তকারীর দেওয়া নথি দেখে সেই আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। এর পরেই তদন্তকারীরা পৌঁছে যান সাংসদের বাড়িতে।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে, মজদুর ভবনে গিয়ে পুলিশ সাংসদের কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে বাধা পেলেও, এ দিন পুলিশকে কোনও বাধা পেতে হয়নি। পুলিশ কর্মীরা আদালতের নির্দেশ নামা নিয়ে মজদুর ভবন তল্লাশি করতে হাজির হন। তাঁরা অর্জুনের কার্যালয়-সহ কয়েকটি ঘরে তল্লাশি চালান।
আরও পড়ুন: ঘনীভূত এক, চোখ রাঙাচ্ছে আরও এক নিম্নচাপ, প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা দক্ষিণবঙ্গে
অর্জুন কিন্তু গোটা ঘটনাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী তাই, পুলিশ তাঁর কথা শুনছে। তিনি রাজনৈতিক লড়াইয়ে পাল্লা দিতে না পেরে পুলিশ দিয়ে লড়াই করছেন। পুলিশ তল্লাশি করতে চায় করুক। আমি গোটা বাড়িটাই দিয়ে দিতে রাজি পুলিশকে। এখানে থেকেই তাঁরা তল্লাশি করুন।” এর পরে তিনি দাবি করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সমবায় ব্যাঙ্কটা তুলে দিতে চাইছেন। মোদী সরকার এই ধরনের সমস্ত সমবায় ব্যাঙ্ককে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। তার পর থেকেই লোকজনকে দিয়ে জোর করে অভিযোগ করাচ্ছে পুলিশ।”
পুলিশ যদিও সাংসদের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, যা নথি পাওয়া গিয়েছে তাতে স্পষ্ট ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে সমবায় ব্যাঙ্কের সাড়ে ১১ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। একই ভাবে টাকা সরানো হয়েছে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে। ভাটপাড়া পুরসভার তহবিল নিয়ে তদন্ত করতে গিয়েও শুধু ২০১৯ সালে সাড়ে ৪ কোটি টাকা তছরুপের হদিশও পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, ‘‘গোটা টাকাটাই অর্জুন সিংহের বিভিন্ন আত্মীয়ের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে।”
আরও পড়ুন: নীরবে সরানো হল ফেডারেশনের মাথা থেকে, তৃণমূলে কি গুরুত্ব কমছে শুভেন্দুর?
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের জোন-১-এর যুগ্ম কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা আদালতে মজদুর ভবন তল্লাশির অনুমতি চেয়েছিলাম। আদালত সেই অনুমতি দিয়েছে। আমরা তল্লাশি করছি।” তিনি জানান, তদন্তের পথে সাংসদকেও জেরা করা প্রয়োজন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠানো হবে।