গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ঘর শত্রু বিভীষণ রুখতে একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ভেঙে দেওয়া হল। এখানেই থেমে না গিয়ে সেই লক্ষ্যে বিভীষণ-তল্লাশি চলছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি-র অন্দরে।
ঘটনার সূত্রপাত, কয়েক দিন আগে। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ একটি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপের ‘চ্যাট’ প্রকাশ্যে আনেন। অর্জুনের দাবি, ওই গ্রুপের সকল সদস্য রাজ্য পুলিশের ১৯৯৮ ব্যাচের আধিকারিক। গ্রুপ সদস্যদের কেউ বর্তমানে সিআইডিতে কর্মরত, কেউ আবার অতীতে সিআইডিতে থাকলেও বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন থানা বা জিআরপিতে কর্মরত। চ্যাটের স্ক্রিনশট দেখিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘মণীশ শুক্ল খুনে আমাকে ফাঁসাতে চাইছে সিআইডি।”
অর্জুন কথোপকথনের যে অংশ দেখিয়েছেন, সেখানে আলোচনার বিষয় মণীশ খুনের তদন্ত। ওই চ্যাটে এক আধিকারিককে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে, ‘শুনছি চার্জশিটে অর্জুনের নাম আছে, খবর পেলাম’। তার জবাবে অন্য এক আধিকারিক লিখেছেন, ‘ওটা তো রাখতেই হবে’। সেই সঙ্গে হাসির ইমোজি। এর পরেই মন্তব্য করা হয়েছে এক আধিকারিক সম্পর্কে, তিনি আবার মণীশ খুনের মামলায় যুক্ত।
সিআইডি সূত্রে খবর, অর্জুন ওই চ্যাট প্রকাশ করার পরেই শোরগোল পড়ে যায় গোয়েন্দা সংস্থার অন্দরমহলে। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এবং সিআইডির এক কর্তা ওই আধিকারিকদের কাছে ব্যাখ্যা চান, কী ভাবে এ রকম চ্যাট প্রকাশ্যে এল? সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের ১৯৯৮ ব্যাচের আধিকারিকদের প্রায় সবাই রয়েছেন ওই হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে। আধিকারিকদের সন্দেহ, গ্রুপের কোনও সদস্যই ফাঁস করেছেন ওই চ্যাট। তবে যে আধিকারিকদের নাম ওই চ্যাটে দেখা গিয়েছে তাঁদের দাবি, গোটাটাই জাল। কেউ জাল একটি স্ক্রিনশট বানিয়েছে। জাল যদি হয়, তা হলে ঘটনার পরেই কেন ওই গ্রুপ ভেঙে দেওয়া হল তার কোনও উত্তর দেননি রাজ্য পুলিশের আধিকারিকরা।
তবে ওই আধিকারিকদের একাংশের দাবি, ‘‘আমরা যদি রাজনৈতিক ভাবে পরিচালিত হয়ে মামলার তদন্ত করতাম, তা হলে মণীশ খুনে এফআইআরে থাকা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দুই পুর প্রশাসককে জেরা করার জন্য তলব করতাম না।” রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশ আধিকারিকদের নিজস্ব এ রকম গ্রুপ থেকে চ্যাট বাইরে ফাঁস হওয়ার ঘটনা এর আগেও কয়েক বার হয়েছে। তবে তা নিয়ে তখন এতটা শোরগোল না হওয়ায় ধামাচাপা পড়ে যায় বিষয়টি।” অন্য এক আধিকারিক বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালের আধিকারিকদের ওই গ্রুপ থেকেই এর আগে আরও এক বার চ্যাট ফাঁস হয়েছে।”
সিআইডি সূত্রে খবর, শীর্ষ কর্তাদের সন্দেহ, রাজ্য পুলিশের আধিকারিকদের অনেকেই গোপনে যোগাযোগ রাখছেন বিজেপি-র বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে। পুলিশের অন্দরে চলা কথাবার্তা আগে ভাগে ফাঁস করে দিচ্ছেন। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, এর পর থেকেই আধিকারিকরা একে অন্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন ভবানীভবনে। আধিকারিকদের একাধিক হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। চলছে অর্জুনের ‘চর’ খোঁজার কাজ। তবে এখনও হদিশ মেলেনি কে বা কারা অর্জুন বা বিজেপির অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। তবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিআইডি-র কোনও আধিকারিক।
আরও পড়ুন: রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছাবসর চেয়ে মুকুল-পুত্রের ফেসবুক পোস্ট
আরও পড়ুন: বাবুল-রায় নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত মহুয়ার
সূত্রের খবর, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে আইপিএস-দেরও সতর্ক করা হয়েছে এ ধরনের আলোচনা থেকে বিরত থাকতে। তাঁদের আরও সাবধানতা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ‘অটো ডিলিট’ করার পদ্ধতি ব্যাবহার করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও একাধিক আধিকারিকদের চিন্তা ‘বিভীষণ’কে নিয়ে। এডিজি পদমর্যাদার এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘২০০৯-১০ সালেও রাজ্য পুলিশে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে তখন এত অ্যাপ ছিল না বলে নজরদারি সহজ ছিল। এখন তা অনেক বেশি কঠিন।”