একে রবিবার, তায় বড়দিন। কিন্তু ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানার সামনে ভিড় কই! চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির ও বেলপাহাড়ির খাঁদারানি ঝিল চত্বরে পিকনিকের ভিড় রয়েছে বটে, তবে সবই স্থানীয় লোকজন। বড়দিন-বর্ষশেষে উৎসবের এই মরসুমে বাইরে থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা এ বার নেহাতই হাতে গোনা।
নোটের চোটেই শীতের মরসুমে জঙ্গলমহলের পর্যটন এ বার ঘায়েল। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি, কোথাও হোটেল-লজে ডেবিট-ক্রেটিড কার্ডে বিল মেটানোর বন্দোবস্ত নেই। সরকারি থাকার জায়গা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স, বাঁদরভুলায় বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রে অনলাইন বুকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তাতে শুধু মিলবে ঘুর। এখানে এসে খাওয়া খরচ মেটাতে হবে নগদে। বেসরকারি হোটেল-লজগুলিতেও এক হাল। তার উপর রয়েছে গাড়ি ভাড়া, টুকিটাকি কেনাকাটা। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার নিমাইকুমার ঘটক বলছিলেন, ‘‘যে ক’জন এসেছেন, তাঁদের অনেকেই কার্ডে খাওয়া খরচ মেটাতে চাইছেন। কিন্তু এখানে তো ও সব ব্যবস্থা নেই।’’
এই সঙ্কটেই পর্যটকের আনাগোনা কমছে। ঝাড়গ্রাম পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত, লজ-হোটেল সংগঠনের নেতা মধুসূদন কর্মকারদের ব্যাখ্যা, “নোট সমস্যার জন্য লোকজন বেড়ানোতেও রাশ টানছেন। না হলে এই সময় এমন হওয়ার কথা নয়।” মধুসূদনবাবুরাই জানালেন, গত বছর বড়দিনে এক-একটা ট্রিপে কমপক্ষে দেড়শো জন বেলপাহাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ বছর সেই সংখ্যাটা ৪৫-৫০ জনে ঠেকেছে। ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় ‘উইন্টার ইভিনিং’ নামে এক অনুষ্ঠান হয়। আয়োজকরা জানাচ্ছেন, গত বছর আমন্ত্রণমূলক ওই অনুষ্ঠানে তিনশো জন পর্যটক এসেছিলেন। আর এ বার শনিবার সন্ধ্যার সেই আসরে হাতে গোনা কয়েকজন এসেছিলেন। ঝাড়গ্রামের অরণ্যসুন্দরী অতিথিশালার মালিক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়ও মানছেন, ‘‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মোটামুটি বুকিং রয়েছে। কিন্তু এ বার সেই উপচে পড়া ভিড়টা নেই। নোটের সমস্যা একটা কারণ তো বটেই।”
এরই মধ্যে যে ক’জন হাতে গোনা পর্যটক এসেছেন, বেড়ানোতে কাটছাঁট করছেন তাঁরাও। কলকাতার যাদবপুর থেকে সপরিবার আসা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের নার্স সঞ্চয়িতা রায় যেমন মানলেন, “নোটের সমস্যার জন্য এক বেলার জন্যই ঝাড়গ্রাম ঘুরে গেলাম।” বাগুইআটির তমোনাশ দত্ত, সরশুনার গৈরিকবরণ আদলদার, খিদিরপুরের বাপ্পা সোমরাও ঝাড়গ্রামে কিছুক্ষণ কাটিয়ে চলে গেলেন ঘাটশিলা। পর্যটকদের কেউ কেউ জানালেন, এটিএম থেকে দু’হাজারি নোট বেরনোয় আরও সমস্যা হচ্ছে। এই প্রত্যন্ত এলাকায় ওই টাকা ভাঙিয়ে দেবে কে!
নোট বাতিলের ধাক্কায় তাই বর্ষশেষের চেনা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে জঙ্গলমহলের পর্যটন।