পাখি গণনার কাজ চলছে জলাধারে। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ বন দফতর আয়োজিত ‘পাখি সুমারি’ পর্ব শুরু হল বাঁকুড়ায়। বিদেশ থেকে এ রাজ্যে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম সেরা ঠিকানা মুকুটমণিপুরের জলাধার এবং লাগোয়া অঞ্চল শীতের মরসুমের কয়েক মাস হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির নিরাপদ ঠিকানা হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার সেখানেই পাখি সুমারি হল। বনবিভাগের আধিকারিক এবং কর্মীদের পাশাপাশি সুমারিতে অংশ নেন জেলার বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাখি বিশারদেরা।
মূলত মুকুটমণিপুর জলাধারে আসা পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা, প্রজাতি-বৈচিত্র এবং তাদের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্পিড বোটে করে জলাধারের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়ান বন দফতরের আধিকারিক ও স্থানীয় পাখি বিশেষজ্ঞদের টিম। আধুনিক ক্যামেরায় ফটোগ্রাফ সংগ্রহের পাশাপাশি দিনভর চলে বাইনোকুলার এবং দুরবীনের সাহায্যে পরিযায়ী পাখিদের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহ।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শীত পড়তে শুরু করলেই বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুরে আসতে শুরু করে পরিযায়ী পাখিরা। বড় পানডুবি (গ্রেট ক্রেস্টেড গ্রিব), কাদাখোঁচার (স্নাইপ) পাশাপাশি ভিনদেশি হাঁস নর্দার্ন পিনটেল, কমন পোচার্ড, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, গ্যাডওয়ালদের শীতের ঠিকানা হয়ে ওঠে মুকুটমণিপুর।
জলের পাখির পাশাপাশি পরিযায়ী অতিথিদের তালিকায় রয়েছে, গাছ এবং ঘাসজমির পাখিরাও। পাখি বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ পাত্র বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে জলাধারের পাড় রং করা হয়েছিল। তার পর সাময়িক ভাবে এই জলাধার লাগোয়া এলাকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল লাল লেজ যুক্ত ভরতপাখিরা (রুফাস টেলড লার্ক)। তবে ফের তারা আসতে শুরু করেছে। ভাল পরিমাণে এসেছে পরিযায়ী খঞ্জনদের একাধিক প্রজাতিও।’’ তিনি জানান, মানুষের কর্মকাণ্ড পাখিদের আচরণ এবং জীবনযাত্রায় কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা জানা এই সমীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্যে। পরবর্তী পর্যায়ে বাঁকুড়া জেলার কদমদেউলি, তালবেড়িয়া, গাংদোয়া, লালবাঁধেও একই ভাবে পাখি গণনার কাজ হবে বলেও জানিয়েছেন অনির্বাণ।
রাজ্য বন দফতরের সেন্ট্রাল সার্কেলের মুখ্য বন সংরক্ষক এস কুলানডাইভেল নিজেও বৃহস্পতিবার পাখি গণনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘‘আগামী এক সপ্তাহ ধরে বাঁকুড়া জেলায় পরিযায়ী পাখি গননা করা হবে। মুকুটমনিপুর ছাড়াও জেলার অন্যান্য জলাধারে আসা পরিযায়ী পাখিও গণনা করা হবে। গণনা শেষে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা, প্রজাতি বৈচিত্র এবং তাদের উল্লেখযোগ্য আচার আচরণ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তৈরী করে আমরা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাব। পাখি গণনার পাশাপাশি যে এলাকাগুলিতে পরিযায়ী পাখিরা আসে সেই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের পাখি নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলে সংরক্ষণের প্রয়াসও চালাচ্ছি আমরা।’’
পাখি বিশারদ সোমশুভ্র পাত্র জানান, প্রায় ৩০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি শীতকালে মুকুটমনিপুরে আসে। কোনওটি সুদূর সাইবেরিয়া, কোনওটি মঙ্গোলিয়া, কোনওটি বা তিব্বত থেকে। পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা ও তাদের সংখ্যা অনেকাংশেই নির্ভর করে সে বছরের আবহাওয়া, মুকুটমণিপুর জলাধারে থাকা জলের পরিমাণ, ওই পর্যটনকেন্দ্রে আসা পর্যটকদের আচরণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর।