—ফাইল চিত্র।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), এনআরসি-র পরে ‘আপাতত’ এনপিআর বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারেও ‘না’ করে দিল রাজ্য সরকার। স্বরাষ্ট্র দফতর সোমবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশের আগে পর্যন্ত এনপিআরের কাজ স্থগিত থাকবে।
জনগণনা আইন অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে আদমশুমারির সঙ্গে এনপিআর তৈরির কাজও করে কেন্দ্র। জনগণনা হয় ১০ বছর অন্তর। একই ভাবে হয় এনপিআর। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জনগণনার দায়িত্বে থাকলেও জেলাশাসকেরাই জনগণনা অফিসার হিসেবে তথ্য সংগ্রহের কাজ করেন। ২০২১ সালের জনগণনার প্রাথমিক পর্বের কাজ শুরু হয়েছে। এই সময়ে এনপিআরের কাজ স্থগিত করে দেওয়ায় কোনও সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেই। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টিতে কোনও স্বচ্ছতা নেই। বোঝা যাচ্ছে না, কেন্দ্র কী করতে চাইছে। রাজ্য সরকার স্পষ্ট দিশা চায়। তাই এনপিআরের কোনও কাজ এখন হবে না। পরের কথা পরে।’’
জনগণনা আইন অনুযায়ী আদমশুমারিতে নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে দেশে উপস্থিত মোট মানুষের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এনপিআরে দেশের নাগরিকদের অভিন্ন একটি তালিকা তৈরি করবে কেন্দ্র। সব নাগরিকের সবিস্তার তথ্য থাকবে ওই রেজিস্টারে। সেন্সাস এবং এনপিআরের নথি সংগ্রহের কাজ চলবে সমান্তরাল ভাবে। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ক’জন প্রকৃত নাগরিক, তার তথ্য এনপিআরের মাধ্যমে পাবে সরকার। কেউ কেউ মনে করছেন, নাগরিকত্বের কার্ড বা ইউনিক নম্বরের সঙ্গে আধার যুক্ত করলে তার নকল সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: প্রতিবাদ একই, তবু ভিন্ন পথে শাসক-বিরোধী
২০০৩ সালের ‘সিটিজেনশিপ (রেজিস্ট্রেশন অব সিটিজেনস অ্যান্ড ইসু অব ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড) রুল’ অনুযায়ী এনপিআর প্রক্রিয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তার ভিত্তিতেই তৈরি হয় রেজিস্টার। নির্দিষ্ট একটি দিনে ও সময়ে দেশে বসবাসকারী মানুষের মোট সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয় জনগণনায়। ফলে দুই প্রক্রিয়াই মোটামুটি একই রকমের।
২০১১ সালে জনগণনার সময় গোটা দেশে প্রথম বার এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫-য় খসড়া এনপিআরের নবীকরণ হয়। সেই তালিকা এখনও প্রকাশিত হয়নি। ২০২১ সালে জনগণনার সময়েও ফের এনপিআর নবীকরণের কাজ করার কথা ছিল। জনগণনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের সঙ্গেই সম্পৃক্ত থাকে এনপিআরের প্রশিক্ষণ। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ভাবে সেন্সাস এবং এনপিআরের সেই যৌথ প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটি জেলাও প্রশিক্ষণের ব্যাপারে নির্দেশিকা দিয়েছিল। সাম্প্রতিক নির্দেশে দু’টি বিষয়কে আলাদা করে দিল রাজ্য।
প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকেরই ধারণা, এনপিআরের হাত ধরে এনআরসি চালু করতে পারে কেন্দ্র। যে-হেতু রাজ্যের সিদ্ধান্ত এনআরসি মানা হবে না, তাই এনপিআর-ও স্থগিত করে দেওয়া হল। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘জনগণনার কাজ স্বাভাবিক ভাবেই চলবে। শুধু এনপিআর হবে না। এনপিআর সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও স্থগিত থাকছে।’’
নির্দিষ্ট আইনের উপরে ভিত্তি করে এনপিআর তৈরি করা হয়। ২০১১ এবং ২০১৫ সালে সেই প্রক্রিয়া চালানোও হয়েছিল। তাই রাজ্যের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে জল কত দূর গড়াবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন অনেকে। আপাতত এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ প্রশাসনিক কর্তারা।