এক সময়ে যে করিমপুর বামদুর্গ ছিল, গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই সেখানে মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোটেও সেই প্রবণতা অব্যাহত থেকেছে। এ বার সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ যদি বিজেপিতে যোগ দেন, তা হলে আসন্ন উপনির্বাচনে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে সব দলের অন্দরেই জল্পনা চলছে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে করিমপুর ১ ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে ৭০টি আসনে বিজেপি জিতেছে। সেই জায়গায় তৃণমূল পেয়েছে ৬১ আসন। সিপিএম মাত্র দু’টি ও কংগ্রেস একটি আসন পেয়েই দৌড় শেষ করেছে। সেই থেকে বিজেপির সঙ্গে টক্কর শুরু হয়েছে তৃণমূলের। গত বছর করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটি বিজেপি দখল করেছিল, বাকিগুলি পেয়েছিল তৃণমূল।
এ বছর লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে আটটি পঞ্চায়েতে তৃণমূল ও বাকি ছ’টি পঞ্চায়েতে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় তৃণমূলের ভোট কমেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। বিজেপির ভোট বেড়েছে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি। সিপিএম কংগ্রেসের মিলিত ভোট কমেছে প্রায় ৪০ হাজার। কংগ্রেসের ভোট ছিলই সামান্য, ফলে রক্তক্ষয় যা হওয়ার মূলত বামেদেরই হয়েছে। অর্থাৎ বিজেপির সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষির যে অভিযোগে সমরেন্দ্রনাথকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেই পথে সিপিএমের কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের একটা অংশ আগেই হাঁটতে শুরু করেছিলেন।
গত লোকসভা নির্বাচনে করিমপুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলকে রক্ষা করেছিল সংখ্যালঘু ভোট। করিমপুর ১ ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি প্রায় ন’হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত করিমপুর ২ ব্লকের ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল প্রায় ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে যায়। কিন্তু সংখ্যালঘুদেরও যে তৃণমূল আর পুরোপুরি ধরে রাখতে পারছে না, সেই ছবিটাও ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বেশ কিছু এলাকায় সংখ্যালঘুরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বা এখনও দিচ্ছেন।
করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র সাংসদ হয়ে যাওয়ায় এই কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন আসন্ন। চলতি ধারা অব্যাহত থাকলে তৃণমূল বনাম বিজেপি টক্করটা আরও কান ঘেঁষে যেতে পারে। এবং সেখানে সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ ফ্যাক্টর হয়ে যেতে পারেন বলে মনে করছে প্রাক্তন বাম বা তৃণমূলেরই একটা অংশ।
তার কারণও আছে। ২০১১ সালে যাঁদের ভোটে সমর জিতেছিলেন (গত বার মহুয়া জিতলেও তিনি প্রচুর ভোট পেয়েছিলেন), সেই সিপিএম কর্মী-সমর্থক বা ভোটারদের একটা বড় অংশ এখন বিজেপির দিকে ঝুঁকে গিয়েছেন। তাঁদের কারণেই করিমপুরে বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে। সমর ঘোষ তাঁদের ‘ঘরের লোক’, চেনামুখ। এখন তিনি যদি বিজেপিতে যোগ দেন এবং তারা যদি তাঁকে প্রার্থী করে, জোরালো টক্কর হতে পারে। বৃহস্পতিবার সমর নিজেই দাবি করেন, “আমি বিজেপিতে গেলে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পাঁচশো জন করে কর্মী-সমর্থক আমার সঙ্গে যাবে।” যদিও সত্যিই বিজেপিতে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য তিনি করতে চাননি।
কিন্তু অন্যএকটি আশঙ্কাও আছে। সমর ঘোষ যদি বিজেপিতে যোগ দিয়েই উপ-নির্বাচনের টিকিট পেয়ে যান, দলের পুরনো নেতাকর্মীদের গোসা হতে পারে, তাঁরা ভোটের কাজে ততটা সক্রিয় না-ও হতে পারেন। তা ছাড়া, অনেকেরই মতে বিজেপিতে এত চট করে টিকিট পাওয়া যায় না। দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির সদস্য মৃগেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমর ঘোষের মতো জনপ্রিয় ও শিক্ষিত নেতা যোগ দিলে দল সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু বিজেপির মতো সংগঠিত দলে চাইলেই টিকিট পাওয়া যায় না। তা দলই ঠিক করবে।’’
দলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, ‘‘সমর ঘোষ বিজেপিতে এলে নিশ্চিত ভাবেই দল শক্তিশালী হবে। এই দলে আদি, নতুন বা পুরনো বলে কিছু নেই, তাই কেউ কারও যোগদানে আপত্তি করবে না। তাঁকে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে কি না, সে তো পরের কথা। নেতৃত্ব ঠিক করবেন।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।