শুভেন্দু এবং মুকুল।
মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন শুক্রবার। সে দিন থেকেই মুকুলকে ‘চাপে’ ফেলতে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করার কথা বলছে বিজেপি। সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি শুক্রবারই বলেছিলেন, ‘‘মুকুল রায়কে দিয়ে যা শুরু হল, তা দলত্যাগ বিরোধী আইন মেনে হয়নি। দু’মাস হোক, তিন মাস হোক, বিরোধী দলনেতা হিসেবে বাংলায় এই আইন কার্যকর করেই ছাড়ব আমি।’’
কিন্তু সেটা সহজ নয় বলেই মনে করছে তৃণমূল। দলের এক প্রবীণ বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একমাত্র স্পিকার। কার বিরুদ্ধে এবং কবে তিনি পদক্ষেপ করবেন সবটাই তাঁর সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে।’’ বস্তুত, সেটা যেমন বিধানসভার ক্ষেত্রে সত্যি, তেমনই সত্যি লোকসভার ক্ষেত্রেও। ফলে শিশির অধিকারী এবং সুনীল মণ্ডলের সাংসদপদ খারিজ করার যে আর্জি তৃণমূল লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে জানিয়েছে, তার ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে বিড়লার উপরেই। প্রসঙ্গত, স্পিকারের ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপর কোনও সময়সীমা নেই।
তবে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শিশির-সুনীলের বিষয়ে তাঁরা স্পিকারকে বহু ‘তথ্যপ্রমাণ’ দিয়েছেন। বিজেপি-র শীর্ষনেতাদের আলিঙ্গন করার ছবি, ভিডিয়োও জমা দিয়েছেন। তাঁদের আশা, লোকসভার স্পিকার ওই বিষয়ে ‘সদর্থক’ ভূমিকা পালন করবেন।
সোমবারই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে বিজেপি বিধায়কদের প্রতিনিধি দল নিয়ে যাচ্ছেন শুভেন্দু। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালকে নালিশ জানানোর পাশাপাশি মুকুলের বিরুদ্ধে যাতে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করা হয়, সে ব্যাপারেও কথা বলতে চান শুভেন্দু। এই প্রসঙ্গে ওই তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘তিনি যেখানে খুশি যেতেই পারেন। কিন্তু শুধু বিধানসভার ক্ষেত্রেই নয় লোকসভাতেও স্পিকার এবং রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান এই বিষয়ে পদক্ষেপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। রাজ্যপাল তো ননই, রাষ্ট্রপতিরও কিছু করণীয় নেই। স্পিকারই শেষ কথা বলবেন।’’
স্পিকারই যে ওই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী, তা ১৯৮৫ সালের দলত্যাগ বিরোধী আইনে স্পষ্ট করে বলা রয়েছে। স্পিকার চাইলে বিষয়টি বিধানসভার প্রিভিলেজ কমিটির কাছে পাঠাতে পারেন। কিন্তু সেটাও স্পিকার চাইলে তবেই। এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। আইন আরও বলছে, এমনকি, ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্পিকারকে নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমাও দেওয়া নেই। তিনি কবে সিদ্ধান্ত নেবেন বা আদৌ নেবেন কি না, সবেতেই শেষ কথা বলার অধিকার একমাত্র তাঁরই। অভিজ্ঞরা বলছেন, স্পিকার যতক্ষণ না কোনও সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন, ততক্ষণ দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার জন্য আদালতেও যেতে পারবে না কোনও পক্ষ। তবে স্পিকারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে তখন আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায়। তবে প্রবীণ বিধায়কদের অপর একাংশ জানাচ্ছে, স্পিকারের যদি একটি ‘যুক্তিগ্রাহ্য’ সময়ের বেশি ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকেন, তা হলে আদালতে আবেদন করা যেতে পারে। প্রাক্তন বিধায়ক তথা আইনজীবীব অরুণাভ ঘোষের কথায়, ‘‘অতীতে সুপ্রিম কোর্ট এবং বিভিন্ন হাইকোর্টে এমন দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করার প্রশ্নে একাধিক হস্তক্ষেপের ঘটনার নিদর্শন আছে। ফলে একেবারেই যে আদালতে আবেদন করা যাবে না, বিষয়টা তেমনও নয়।’’
ভারতীয় সংবিধানের ৫২তম সংশোধনে এই আইনের যে রূপ রয়েছে, তা বিলক্ষণ জানে বিজেপি-ও। ওই আইনের সুবিধা-অসুবিধা জানেন শুভেন্দুও। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-র পরিষদীয় দলনেতা নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ যখন কলকাতায় এসেছিলেন, তখনই ওই আইন আরও শক্তিশালী করার আর্জি জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। কারণ, বিজেপি-র আশঙ্কা, মুকুলের সঙ্গে অনেক বিধায়কই চলে যেতে পারেন তৃণমূলে। এর পর যখন রাজ্যসভার ভোট হবে, তখন দলবদল আরও বাড়তে পারে।