BJP

মুখ্যমন্ত্রীর বর্ধিত বেতনের বিরোধিতা শুভেন্দুর, কিন্তু বিজেপির পরিষদীয় দল কি লিখিত ভাবে তা জানাবে?

রাজ্যের মন্ত্রী থেকে বিধায়ক— সকলেরই বেতন বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সকলেরই বৃদ্ধি মাসে ৪০ হাজার টাকা। বিজেপি এর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বর্ধিত হারে বেতন কি নেবেন তাদের বিধায়কেরা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৯
Share:

বৃহস্পতিবারই বেতনবৃদ্ধির ঘোষণা করেন মমতা। বিরোধিতা করেন শুভেন্দু। — ফাইল চিত্র।

বেতন বেড়েছে রাজ্যের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদের। এক লাফে অনেকটা বেতন বাড়ানো হয়েছে রাজ্যের সব বিধায়কেরও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নতুন বেতন ও ভাতার কথা জানিয়েছেন রাজ্য বিধানসভায়। কিন্তু বেতনবৃদ্ধির ঘোষণার পরে পরেই তার বিরোধিতা করেছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, তাঁরা এই বৃদ্ধির বিরোধিতা করছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত মৌখিক ভাবে সমর্থন না করলেও বর্ধিত বেতন না নেওয়ার জন্য বিজেপির তরফে বিধানসভার সচিবালয়কে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠি দিয়ে তা জানাতে হয়। তেমন কোনও চিঠি দেওয়া হবে কি? তা অবশ্য এখনও ঠিক হয়নি।

Advertisement

বর্ধিত বেতন যে তাঁরা নেবেন না, তা স্পষ্ট করে বলেননি শুভেন্দু। তিনি বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিধায়কের ভাতাবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি না।’’

কেউ কোনও কিছুর বিরোধিতা করলে তা গ্রহণ করবেন না, সাধারণ ভাবে এটাই রেওয়াজ। ফলে সকলেই এটা ধরে নিয়েছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কথা যখন বিরোধী দলনেতা জানিয়েছেন, তখন তাঁর দলের বিধায়কেরা বর্ধিত বেতন গ্রহণ করবেন না। কোনও সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেও প্রায়োগিক স্তরে তার রূপায়ণ না করলে সেটিও জনসমক্ষে ভাল বার্তা বহন করে না। শুভেন্দু যখন ওই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, তখন তিনি বিরোধী দলনেতা হিসেবেই তা জানিয়েছিলেন। এবং তা জানিয়েছিলেন দলের বিধায়কদের বড় অংশের উপস্থিতিতেই।

Advertisement

কিন্তু জানা যাচ্ছে, বর্ধিত বেতন না নেওয়ার বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নেয়নি বিজেপি। বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার কথায়, ‘‘রাজ্যের অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য সুবিধা পাচ্ছেন না। সেখানে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা। বিরোধী দলনেতা সেটাই বলেছেন।’’ এর জন্য কি তাঁরা বর্ধিত বেতন বয়কট করবেন? জবাবে মনোজ বলেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা বর্ধিত বেতন নেওয়া হবে কি না তা বলেননি। সেটা ঠিক হবে পরিষদীয় দলের বৈঠকে। যা সিদ্ধান্ত হওয়ার সেখানেই হবে। এর পরেই আমরা জানাব, বিধানসভার সচিবালয়কে চিঠি দেব কি না।’’

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মন্ত্রী থেকে বিধায়ক— সব স্তরেই মাসিক ৪০ হাজার টাকা করে বেতনবৃদ্ধি করছে সরকার। সরকারের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বিধায়কদের বেতন প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হল ৫০ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীরা এত দিন মাসে ১০ হাজার ৯০০ টাকা করে পেতেন। এখন থেকে তাঁরা পাবেন ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। পূর্ণমন্ত্রীদের বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা। তাঁরা বেতন বাবদ এ বার থেকে ৫১ হাজার টাকা পাবেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং প্রতিমন্ত্রী, পূর্ণমন্ত্রীরা এত দিন ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পেতেন। এ বার থেকে তাঁরা পাবেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।

এর আগেও তৃণমূল সরকার দু’বার বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করেছে। বাম আমলের তুলনায় বেতন অনেকটাই বেড়েছিল ২০১৭ সালে। এর পরে আবার বাড়ে ২০১৯ সালে। দ্বিতীয় দফায় বেতন বাড়ানোর সময়ে তার প্রতিবাদ করেছিল সিপিএম। সেই সময়ে বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বিধানসভার সচিবালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, বর্ধিত বেতন দলের বিধায়করা নেবেন না। যদিও তার পরেও বেতন নিতে হয়েছিল বাম বিধায়কদের। শুক্রবার সুজন বলেন, ‘‘বেতন বেড়ে গেলে তা প্রত্যাখ্যানের সুযোগ থাকে না। কারণ, যে পদ্ধতিতে বেতন হয়, তাতে সরাসরি বিধায়কদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে যায়। তা ফিরিয়ে দেওয়ার তো কোনও উপায় নেই। তবে আমরা যে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছিলাম, সেটা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম।’’

বিজেপিও কি সেই পথেই হাঁটবে?

দলের বিধায়কদের একাংশ জানিয়েছেন, সেটা পরিষদীয় দলেই ঠিক হবে। তবে তাঁদের কণ্ঠেও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতাই শোনা গিয়েছে। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ি থেকে দক্ষিণবঙ্গের আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল— সকলেই শুক্রবার বলেন, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, গ্রামীণ পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার, অস্থায়ী কর্মী এবং ভোকেশনাল শিক্ষকদের প্রত্যেকের সমকাজে সমবেতন ঘোষণা করুন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিজেপি চায় সরকারি কর্মচারী, পুলিশ, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দিক রাজ্য। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে টাকার পরিমাণ হোক দু’হাজার।

তবে সিপিএম নেতা সুজন সেই সঙ্গে নতুন দাবিও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমান বিধায়কদের অনেকেই ধনী। দামি দামি গাড়ি চড়েন। তাঁদের বেতন না বাড়িয়ে বরং অনেক প্রাক্তন বিধায়কের কথা ভাবা উচিত। তাঁদের অনেকে ঠিক মতো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।’’

সুজনের বক্তব্য অনুযায়ী অবশ্য বিজেপির পরিষদীয় দলনেতা (বিরোধী দলনেতা) বিধানসভার সচিবালয়কে চিঠি দিয়ে বর্ধিত বেতন না-নেওয়ার কথা জানালেও বিধায়কদের অ্যাকাউন্টে তাঁদের বর্ধিত বেতন জমা পড়েই যাবে। বিজেপি বিধায়কেরা ওই বর্ধিত অর্থ না গ্রহণ করে ফিরেয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন কি? এখন দেখার, পরিষদীয় দল আনুষ্ঠানিক ভাবে কী সিদ্ধান্ত নেয়। বিরোধী দলনেতা সর্বসমক্ষে যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন, তা শুধু মৌখিক বিরোধিতার স্তরেই থেকে যায়? না কি তা সরকারি ভাবেও প্রয়োগ করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement