হলদিয়ায় লটারির টিকিট কাটছেন কুণাল। — নিজস্ব চিত্র।
একে লটারির টিকিট। তায় আবার ‘ডিয়ার লটারি’। কোনও রাজনৈতিক নেতা লটারির টিকিট কাটতে পারবেন না এমন কোনও কারণ নেই। কিন্তু চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা এনেছে লটারি-প্রসঙ্গ। এমন এক লটারি-রাজনীতির আবহেই হলদিয়ায় এক ডিয়ার লটারির স্টলে সাতসকালে দেখা গেল রাজ্যে তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে। টিকিট কাটতেও দেখা যায় তাঁকে। তার আগে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথাও বলেন। কোটিপতি হওয়ার লোভে কি না জানা না গেলেও কুণাল যে টিকিট কেটেছেন তা স্বীকারও করে নেন তৃণমূল নেতা। বললেন, ‘‘অনেকেই কেনেন, জেতেন। আমিও কিনলাম। জেতাজেতি পরের বিষয়, ৩০ টাকার টিকিট কেটেছি।’’
সম্প্রতি ডিয়ার লটারির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছে। শাসকদলের কেউ কেউ কালো টাকা সাদা করতে লটারিতে পুরস্কার পাচ্ছেন। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়া বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার পাওয়ার অভিযোগও ওঠে। শুধু তাই নয়, অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার লটারিতে প্রাপ্তিযোগের খবর পাওয়া যায়। সিবিআই প্রথমে দাবি করেছিল, চলতি বছরে লটারির পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা তৃণমূলের অনুব্রত এবং সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। ওই দু’জনের দু’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পুরস্কার বাবদ মোট ৫১ লক্ষ টাকা ঢুকেছে দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সম্প্রতি দাবি করা হয়, সুকন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি থেকে জানা গিয়েছে, ২০ জানুয়ারি লটারির থেকে ৫০ লক্ষ টাকা জিতেছিলেন সুকন্যা।
যদিও বিজেপি অভিযোগ করেছে, অতীতে অনুব্রত এক কোটি টাকার পুরস্কারও জিতেছেন। পিতা ও কন্যার বার বার লটারি জেতার পিছনে কি বরাতজোর, না অন্য কোনও কারণ রয়েছে— তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করে সিবিআই।জোড়াসাঁকোর তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তর স্ত্রীও কিছু দিন আগে লটারি থেকে এক কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। প্রথমে অভিযোগ থাকলেও পরে স্ত্রী রুচিকা গুপ্ত যে ডিয়ার লটারির প্রথম পুরস্কার জিতেছেন তা স্বীকার করেন বিবেক। সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘লটারির টিকিট কাটা অন্যায়, না কি জেতা অন্যায়?’’ শুক্রবার সিবিআই সন্ধান পায়, গরু পাচার চক্রের অন্যতম অভিযুক্ত এনামূল হকও ২০১৭ সালে এক কোটির পুরস্কার জিতেছিলেন।
ডিয়ার লটারি নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরব বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রুচিকার পুরস্কার প্রাপ্তির পরেই তিনি টুইট করেছিলেন, ‘‘ডিয়ার (ভাইপো) লটারি আর তৃণমূলের মধ্য যে সম্পর্ক রয়েছে, তা আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি। এটা টাকা পাচারের সহজ উপায়। সাধারণ মানুষ টিকিট কেনেন আর তৃণমূল নেতারা বাম্পার পুরস্কার জেতেন। প্রথম অনুব্রত মণ্ডল জিতলেন। এ বার তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তের স্ত্রী এক কোটি টাকা পেলেন।’’
সেই শুভেন্দুর এলাকা হিসাবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরের সংগঠন দেখার দায়িত্বে এখন কুণাল। হলদিয়ায় তাঁর নতুন বাসস্থানও হয়েছে। সেই বাড়ি থেকে শুক্রবার সকালে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন কুণাল। দলীয় দফতর ঘুরে স্থানীয় সেলুনে, চায়ের দোকানেও যান। এর পরেই পাশের লটারির টিকিটের দোকানে। কুণাল বলেন, ‘‘আমি টিকিট বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম, কে পুরস্কার পাবে সেটা নাকি আগে থেকে সব ঠিকঠাক থাকে? জবাবে উনি বললেন, এ সব তো জানি না, আমরা শুধু বিক্রি করি। তার পরে ৩০ টাকার টিকিট কিনে ফেললাম।’’ জিতে গেলে কী করবেন? হাসলেন কুণাল।