বক্তা কি তবে শাহ একাই! — ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার, পঁচিশে বৈশাখ কলকাতায় থাকছেন অমিত শাহ। সকালে যাবেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। বিকেলে ‘খোলা হাওয়া’ নামে এক সংগঠনের রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার কথা তাঁর। প্রথমে যখন এই অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করা হয়, তখন কথা ছিল অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শঙ্কর, গায়িকা সোমলতা আচার্যদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষে বক্তৃতা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগের দিন, সোমবার যে আমন্ত্রণপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে বক্তা হিসাবে শুভেন্দুর নামই নেই। তাঁর নাম রয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ অন্যান্যদের সঙ্গে। যাঁরা শুধু অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
কিন্তু কেন এমন হল? মঙ্গলবার একাধিক বার প্রশ্ন করা হলেও তা নিয়ে বিজেপির কোনও নেতা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে নারাজ। কেউ বলছেন, এটা অন্য সংগঠনের অনুষ্ঠান। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই। কেউ বলছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কর্মসূচিতে বক্তার তালিকা যে কোনও মুহূর্তে পাল্টাতে পারে। আবার ‘খোলা হাওয়া’-র সভাপতি তথা বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন ‘ব্যস্ততা’র কারণ দেখিয়ে। সংগঠনের অন্যান্যদের কথাতেও নানা ধোঁয়াশা।
বদল শুধু এটুকুই নয়। প্রথম প্রচারপত্রে বক্তা হিসাবে শাহ, শুভেন্দু এবং স্বপনের নাম ছিল। পরে একটি প্রচারপত্র তৈরি করা হয়, যাতে দেখা যায় শুভেন্দু এবং স্বপনের নাম নেই বক্তা তালিকায়। সেখানে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শিল্পীদের ছবি দিয়ে ‘গৌরবময় উপস্থিতি’ শাহ ছাড়াও কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডির নাম দেখা যায়।
এর পরে চার পাতার যে প্রচারপুস্তিকা তৈরি হয়েছে, তাতে প্রথম পাতায় বক্তা হিসাবে শুধুই শাহের নাম। দ্বিতীয় পাতায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এমন শিল্পীদের নামের সঙ্গে বিজেপির কোন কোন নেতা উপস্থিত থাকবেন, তার উল্লেখ রয়েছে। সেখানে পাশাপাশি রয়েছে শুভেন্দু ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নাম। এ ছাড়াও রয়েছে রাজ্য থেকে তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, নিশীথ প্রামাণিক এবং শান্তনু ঠাকুরের নাম। সেই সঙ্গে রয়েছে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নামও। তবে মেদিনীপুরের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের নাম নেই। উল্লেখযোগ্য ভাবে আর নেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী রেড্ডির নামও। এ নিয়ে কোনও ‘সন্তোষজনক’ উত্তর না দিয়ে ‘খোলা হাওয়া’ সংগঠনের পরিচালন সমিতির পক্ষে বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী বক্তৃতা করবেন। সুকান্ত মজুমদারও। যাঁদের নাম রয়েছে, হয়তো তাঁদের সকলকেই বক্তা হিসাবে দেখা যাবে। কে কে বক্তব্য রাখবেন সেটা আমরাই ঠিক করব। অপেক্ষা করুন। একটু রহস্য থাকুক।’’
এই রদবদল নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে নানা জল্পনা এবং প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে কেউই শাহের সফরের আগের দিন এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না। প্রসঙ্গত, পয়লা বৈশাখেও কলকাতায় ছিলেন শাহ। তার আগের দিন বীরভূমের সিউড়িতে দলীয় সমাবেশে তাঁর মুখে বাকি নেতাদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে শুভেন্দুর নামই বেশি শোনা গিয়েছিল। প্রশংসাসূচক ভঙ্গিতেই শাহ বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দু ধারাবাহিক ভাবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন। দিদির দাদাগিরির বিরুদ্ধে সামনে থেকে লড়ছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা। তৃণমূল কংগ্রেসের চুরি, দুর্নীতিকে জনসমক্ষে বেআব্রু করে দিচ্ছেন।’’
যোগ-বিয়োগেই জল্পনা।
শাহের বক্তব্য নিয়ে রাজ্য বিজেপির কোনও নেতাই প্রকাশ্যে দ্বিমত প্রকাশ করার ধৃষ্টতা দেখাননি। তবে দলের অন্দরে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। যার নির্যাস ছিল— শাহ কি শুভেন্দুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? কেন্দ্রীয় স্তরে ‘ওজনদার’ এই নেতা কি রাজ্য সভাপতি সুকান্তের তুলনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? অনেকেই মনে করছেন, দলের ভিতরের সেই ‘ক্ষোভ’ প্রশমনেই শাহের রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তা তালিকায় অদলবদল করা হয়েছে। অনেকে আবার বলছেন, ‘খোলা হাওয়া’ সংগঠনের নামে বিজেপি আসলে ‘ভদ্রলোক বাঙালি’-র ভোট পেতে চাইছে। সেই কাজটি যাতে সুচারু ভাবে হয়, তা মাথায় রেখেই শিল্পী থেকে বক্তা নির্বাচন। কাদের নাম আমন্ত্রণ ও প্রচারপত্রে থাকবে সেটাও ভেবে চিন্তে করা হয়েছে। বার বার বদলও করা হয়েছে। সংস্কৃতিমনস্ক শহুরে ভোটারদের মন জয়ের লক্ষ্যেই উপস্থিত গণ্যমান্যদের তালিকায় লকেট জায়গা পেলেও দিলীপ বাদ গিয়েছেন।
এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে সোমবার রাতেই কলকাতায় চলে আসছেন শাহ। রাজারহাটের একটি হোটেলে থাকবেন তিনি। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ যাবেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। সেখানে মিনিট ১৫ থাকার পরে চলে যাবেন রেস কোর্সে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে বনগাঁয় বিএসএফ-এর একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবেন। বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের একটি অনুষ্ঠান রয়েছে সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে। পরে সেখানেই রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তৃতা করার কথা। এই পর্যন্ত সকলে জানেন। কিন্তু শাহের সঙ্গে একই মঞ্চে আর কে কে বক্তা হিসাবে ডাক পান, সেটা, বিশ্বজিতের কথায়, ‘রহস্য’। সেই রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায় রাজ্য বিজেপি।