মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছনো সত্ত্বেও ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিস্তর সময় চলে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই বিপত্তি ঘটে। কেন সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হয় না, সেই প্রশ্ন আছে জনমানসে। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রশ্ন তুললেন, ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই চিকিৎসা শুরু হবে না কেন?
বৃহস্পতিবার এসএসকেএম বা পিজি-র কিছু প্রকল্পের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সেখানকার ট্রমা কেয়ার পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি অনুষ্ঠানে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ট্রমা কেয়ারে গিয়ে খারাপ লাগল। কয়েক জন সকালে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু এখনও (ভর্তির) প্রসেস চলছে। আগে তো চিকিৎসা শুরু করো!’’ আগেও মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বার বলেছেন, রোগী হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করতে হবে।
সরকারি চিকিৎসকদের প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসক, নার্সদের গুরুত্বের কথাও বলেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘জুনিয়র ডাক্তার বলতে আমি ছাত্রদেরও বুঝি। ওঁদের কাজ শেখার আগ্রহ খুব। পিজি, কলকাতা মেডিক্যাল, আরজি কর অন্যদের থেকে আলাদা। এখানে সুযোগ পেতে গেলে অত্যন্ত মেধাবী পড়ুয়া হতে হয়। এ-সব জায়গা থেকে সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ ডাক্তার হয়ে বার হন তাঁরা।’’
মমতার অভিযোগ, এমন অনেক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, যেখানে প্র্যাক্টিক্যাল, থিয়োরি কিছুই নেই। কিন্তু টাকার বিনিময়ে ভর্তি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সেখানকার পড়ুয়ারা ডাক্তার হয়ে গেলেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় কি না, ভাবতে হবে। কারণ, যদি ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট করতে না-পারেন, তা হলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর ক্ষতি হতে পারে।’’ চিংড়িঘাটায় গাড়ির ধাক্কায় আহতদের মধ্যে তিন জন পিজি-র ট্রমা কেয়ারে আছেন। দিল্লি থেকে ফিরে তাঁদের কাছে যান মমতা, কিন্তু চিকিৎসার হাল দেখে সন্তুষ্ট হননি।
পরে মমতা বলেন, ‘‘আহতদের ক্ষতে ব্যান্ডেজের বদলে স্রেফ লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখা হয়েছে কেন? এক জনের স্যালাইনের সুচ এমন ভাবে ফোটানো হয়েছে যে, গলগল করে রক্ত বেরিয়েছে। এক বার পিজি-তে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলাম। এমন সুচ ফুটিয়েছিল যে, হাত ফুলে কালো হয়ে গিয়েছিল। তাই ভয়ে আর পরে টেস্ট করাতে আসিনি।’’ পিজি গর্বের জায়গা, সেখানে পরিষেবা এমন হবে কেন? প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী পিজি-র অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন, আরও লোকবলের প্রয়োজন হলে যেন স্বাস্থ্যসচিবকে বলা হয়। রেফারের বিষয়েও আরও সজাগ থাকার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে উডবার্ন ব্লকের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে প্রায় দু’ঘণ্টা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি জানান, চোখের চিকিৎসার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন।
এ দিকে, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম এবং মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের অভিযোগ, চিকিৎসক-নার্স সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁদের উপরে নিগ্রহের ঘটনায় ইন্ধন জোগাবে।