Sandip Ghosh

আগেই অভিযোগ সন্দীপের বিরুদ্ধে, কেন চুপ প্রশাসন

সন্দীপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০২৩ সালে। লিখিত ভাবে স্টেট ভিজিল্যান্স কমিশনে ১৫টি অভিযোগ জানিয়েছিলেন আখতার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৪ ০৮:০৫
Share:

সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল ছবি।

গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তার পরেও পদক্ষেপ করতে দীর্ঘ এক বছর সময় কেন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অন্দরেই।

Advertisement

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন সেই হাসপাতালেরই তৎকালীন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। এত দিন পরে গত ১৬ অগস্ট স্বরাষ্ট্র দফতর লিখিত ভাবে জানিয়েছে, ২০২১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করবে নবগঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি)। টালা থানায় সন্দীপের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং দুর্নীতি দমন আইনে অভিযোগ দায়ের করেন স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার দেবল কুমার ঘোষ। তার ভিত্তিতে সোমবার তদন্ত শুরু করেছে এসআইটি। পুলিশ সূত্রের খবর, ২০২২ সালের ৩০ জুন, ২৪ অক্টোবর এবং ৮ ডিসেম্বর সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল দেবল ঘোষের কাছে। তার ভিত্তিতে টালা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। যদিও সেগুলি প্রকাশ্যে আসেনি।

সন্দীপ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০২৩ সালে। লিখিত ভাবে স্টেট ভিজিল্যান্স কমিশনে ১৫টি অভিযোগ জানিয়েছিলেন আখতার। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সরকারি অর্থের অপব্যবহার, স্বাস্থ্যভবন এবং কলেজ কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া সরকারি সম্পত্তি অনৈতিক ভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া, শিক্ষা খাতের তহবিলের অপব্যবহার, আর্থিক লাভের কারণে অবৈধ ভাবে আধিকারিকদের বদলি করা ইত্যাদি। চিকিৎসা বর্জ্য বেআইনি ভাবে বিক্রির চক্রও সন্দীপ তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি অনলাইন দরপত্র এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বড় অঙ্কের বরাতকে ছোট ভাগে ভেঙে নিজের পছন্দের সংস্থাকে বরাত দেওয়া, ওষুধের বরাতে দুর্নীতি, কোভিড তহবিল ব্যবহার করে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনারও অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

আখতারের দাবি, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করাতেই অধ্যক্ষ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তার জেরে আচমকাই রাজ্যের হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে বদলি করা হয়। পরে তাঁকে বদলি করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজেও। অভিযোগ, সেই সময়ে সন্দীপ নিজের প্রভাব খাটিয়ে আখতারকে আর জি কর থেকে ‘রিলিজ়’ দেননি। স্বাস্থ্য দফতরে বিষয়টি জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। ৫২ দিন এই ভাবে কেটেছিল। আখতার বলেন, "ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার ‘সার্ভিস ব্রেক’ করা হয়েছিল। যাতে অবসরের পরে পেনশন পেতে সমস্যা হয়। এত কিছুর পরেও আর জি করে ঘটে চলা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব ছিলাম। রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশনে অভিযোগ করেছিলাম। এত দিন পরে তদন্ত শুরু হয়েছে। "

প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের এই পদক্ষেপ তখন, যখন ওই হাসপাতালে পড়ুয়া-চিকিৎসকের হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকার প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মনোভাব রাজ্যের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে। অথচ তার আগে পর্যন্ত একাধিক বার অধ্যক্ষকে বদলি করা হলেও, কোনও ‘অদৃশ্য শক্তির’ কারণে সেই আদেশনামা প্রত্যাহার করতে হয়েছিল সরকারকেই। আবার হত্যাকাণ্ডের পরে অধ্যক্ষের ইস্তফার আর্জি গ্রহণ করেনি সরকার। বরং তাঁকে আর জি কর থেকে সরিয়ে ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষের পদেই পাঠানো হয়েছিল। ফলে পর্যবেক্ষকদের অনেকের প্রশ্ন, পরিস্থিতি বেগতিক হচ্ছে বুঝেই কি সন্দীপকে ‘ঝেড়ে’ ফেলতে চাইছে নবান্ন?

প্রসঙ্গত, রাজ্যের তৈরি এসআইটি-এর মাথায় রয়েছেন রাজ্য পুলিশের আইজি প্রণব কুমার। বাকি
সদস্যরা হলেন, ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ) ওয়াকার রেজ়া, ডিআইজি (সিআইডি) সোমা দাস মিত্র ও কলকাতা পুলিশের ডিসি (মধ্য) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement