সব্যসাচী চক্রবর্তী। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
এখনও সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে যে কয়েক জন শিল্পী-অভিনেতা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। কিন্তু সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের ‘ইনসাফ যাত্রা’ শনিবার ৪৪ দিনে পড়লেও এক দিনও দেখা গেল না অভিনেতা সব্যসাচী ‘ফেলুদা’ চক্রবর্তীকে। বাদশা মৈত্র, দেবদূত ঘোষদের ওই যাত্রায় হাঁটতে দেখা গেলেও টলিউডের ‘বেণু’কে সেখানে দেখা যায়নি। এরই মধ্যে আবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে তিনি রাজ্য সরকারের প্রদত্ত সম্মান গ্রহণ করেছেন। তাই দুইয়ে-দুইয়ে চার করে বাম মহলে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, তা হলে কি দূরত্ব বাড়ল? অনেকের মতো সব্যসাচীও কি বাম ছোঁয়াচ এড়িয়ে যাচ্ছেন?
তবে আনন্দবাজার অনলাইনকে সব্যসাচী তাঁর বক্তব্য জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা এই সব গুঞ্জন রটাচ্ছেন তাঁদের রটাতে দিন। তাঁরা হয়তো এর জন্য টাকাও পান। আমি সমর্থক (বামেদের) ছিলাম, আছি, থাকব।’’
কিন্তু তাঁকে কেন দেখা যাচ্ছে না মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের ইনসাফ যাত্রায়? সব্যসাচীর কথায়, ‘‘আগামী ১ জানুয়ারি আমাদের নাটক রয়েছে। তার রিহার্সাল নিয়ে আমি প্রচণ্ড ব্যস্ত। তা ছাড়া, কোভিডের পর শারীরিক দুর্বলতার কারণে আমি কাজও ছেড়ে দিয়েছি। এখন মিছিলে যাওয়া, হুড়োহুড়ি, সেল্ফি তোলার ভিড় সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’ তাঁকে কি ডেকেছিল সিপিএমের যুব সংগঠন? সব্যসাচী বলেন, ‘‘হ্যাঁ-হ্যাঁ। মিনাক্ষীর সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। ওঁকে আমি বলেছি।’’
শনিবার ৪৪তম দিনে ইনসাফ যাত্রা রয়েছে নদিয়ায়। বাকি দুই ২৪ পরগনা ছুঁয়ে ২২ ডিসেম্বর যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ডে একটি সমাবেশ রয়েছে। তার পরে ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে সভা করার ডাক দিয়েছে বাম যুব সংগঠনটি। যদিও শনিবার পর্যন্ত ব্রিগেডে সভা করার জন্য ফোর্ট উইলিয়ামের প্রয়োজনীয় অনুমতি মেলেনি। তা আদৌ ব্রিগেডে করা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন সিপিএমের নেতারা।
যুব সংগঠনের এই যাত্রা নিয়ে বাম মহলে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মিনাক্ষীকে ঘিরেও উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। সেই যাত্রায় সব্যসাচীকে না দেখতে পাওয়ায় জল্পনা তৈরি হয়। তাতে আরও জলবাতাস দেয় চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে সব্যসাচীর রাজ্য সরকারি সম্মানগ্রহণ। যে ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) চেয়েছিলেন আমি যাই। আমার বন্ধু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং হরনাথ চক্রবর্তী আমায় অনুরোধ করেছিলেন। আমি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। তাই গিয়েছি। এটা টেলিসম্মান নয়। আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। যাঁরা জানেন না, তাঁরা এ সব গুঞ্জন ছড়াচ্ছেন।’’
অসমর্থিত প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এর আগেও সব্যসাচীকে সম্মান দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে তখন তিনি তাঁর অপারগতার কথা জানিয়েছিলেন। যদিও এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানিক ভাবে কেউই কখনও কিছু বলেনি। ঘটনাচক্রে, বছর দেড়েক আগেই ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্মেলন হয়েছিল সল্টলেকে। সেই সম্মেলনের জন্য গঠিত অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন সব্যসাচী। ফলে তাঁর ইনসাফ যাত্রায় গরহাজির থাকা বাম মহলে অনেকেরই চোখে পড়েছে। তবে সব্যসাচী সে সব জল্পনাকে মাঠের বাইরে ফেলে জানিয়ে দিচ্ছেন, বামেদের প্রতি তাঁর আনুগত্য অটুট। তিনি বাম সমর্থক ছিলেন, আছেন, থাকবেন।