কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই
আসন সংখ্যায় ‘বিরোধী’ থাকলেই চলবে না, রাস্তার আন্দোলনেও ‘বিরোধী’ হয়ে উঠতে হবে। শুক্রবার রাতে বিজেপির রাজ্য দফতরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই বার্তাই দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর প্রশ্ন, বিরোধী ভোট ভেঙে বামেদের দিকে চলে যাচ্ছে কেন?
শনিবার শাহ নবান্নে পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যোগ দেন। তার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। তাঁর আগে শুক্রবার রাতে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন), পাঁচ সাধারণ সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক, দুই সহ-পর্যবেক্ষক এবং কিছু বাছাই সাংসদকে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই রাজ্যের দলীয় সংগঠন নিয়ে নানা প্রশ্নে নেতৃত্বকে কার্যত বিদ্ধ করেন শাহ।
সূত্রের খবর, এই বৈঠক কখনওই ‘আকস্মিক’ ছিল না। বরং বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নিয়েই তিনি দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে শাহ জানিয়েছেন, বিধানসভার ভেতরে শুধু সংখ্যার বিচারে ‘বিরোধী’ থাকলে চলবে না। রাস্তায় নেমে এমন আন্দোলন করতে হবে যাতে ‘বিরোধী’ হিসেবে চোখে পরে।
চলতি বছর জুন-জুলাই মাসে হায়দ্রাবাদে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে বাংলা, ওড়িশা ও তেলেঙ্গানা এই তিনটি রাজ্যকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তারপরই জাতীয় রাজনীতিতে শাহ-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সুনীল বনসলকে এই তিনটি রাজ্যের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি শাহের আর এক খাস লোক মঙ্গল পাণ্ডেকে পর্যবেক্ষক করে বাংলায় নিয়ে আসা হয়। এখন তাঁরাই জেলায় জেলায় চষে সংগঠনের হালহকিকত সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে শাহকে দিচ্ছেন।
সূত্রের খবর, বৈঠকে শাহ বাংলার অবস্থা সম্পর্কে মঙ্গলের কাছে জানতে চান। তারপরই তিনি জানান, বাংলায় দল দু’কোটি ২৯ লক্ষ ভোট পেয়েছে। রাতারাতি এই সব মানুষগুলি দল ছেড়ে চলে গেলেন নাকি? দলীয় নেতারা কি তাঁদের খোঁজ রাখেন? তাঁর ধারণা কর্মীরা দলেই আছেন। নেতারা তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। সেই সঙ্গে তিনি জানতে চান, স্থানীয় নির্বাচনে বামেরা কী করে বিজেপিকে টেক্কা দিচ্ছে? বামেদের কাছে ভোট ভাঙছে কী করে? কেন নিচু তলায় বোঝানো যাচ্ছে না বিজেপিই একমাত্র বিকল্প?
বৈঠকে শাহ পঞ্চায়েত নির্বাচনের মঞ্চেই লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্রের দাবি। শাহ জানিয়েছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দলকে গত বারের চেয়ে আসন সংখ্যা বাড়াতেই হবে।
সোমবার কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বাড়িতে বাংলার সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা শুভেন্দুর। পাশাপাশি মঙ্গলবার শুভেন্দু-সুকান্তর সঙ্গে শাহ বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দুর দাবি, “উনি(অমিত শাহ) আমাকে বলেছেন, মঙ্গলবার তোমাকে ৩০ মিনিট সময় দিচ্ছি। সংসদে আমার অফিসে এসে আমার সঙ্গে দেখা করবে। অনেকগুলি বিষয় আছে যেটা তোমার এবং রাজ্য সভাপতির সঙ্গে আমার আলোচনা করা দরকার।”