বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য বিজেপি-তে প্রথম থেকেই সঙ্ঘ শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার সাংসদ সুভাষ সরকার। বিজেপি-র রাজ্য সংগঠনে অনেক বার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে সুভাষকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। একটা সময়ে রাহুল সিংহের পরে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ সুভাষকে রাজ্য সভাপতি করা হবে বলেও আলোচনা চলেছিল গেরুয়া শিবিরে। তখন অবশ্য রাজনীতিতেই আসেননি দিলীপ ঘোষ। দিলীপের আগমনে সব কিছু বদলে যায়। সুভাষ শেষ পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতিই থেকে যান। অবশেষে কোনও দিনই রাজনীতির আলো কাড়ার চেষ্টায় মুখ না-খোলা মিতভাষী সুভাষের সুদিন এল।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগেই অবশ্য সুভাষকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁকে ঝাড়খণ্ডে দলের সহ-পর্যবেক্ষক করা হয়। এর পর বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তেহার তৈরিতে মূল দায়িত্বও বরাবর আড়ালে থাকা সুভাষের উপরেই দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। ভোটের ফলে বিজেপি আশানুরূপ সাফল্য না পেলেও দলের নির্বাচনী ইস্তেহার নিয়ে যথেষ্টই আলোচনা হয় রাজ্য রাজনীতিতে। শুধু সেই সাফল্যই নয়, ভোটের অঙ্কেও নিজের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাঁকুড়া শহরের খ্যাতনামা চিকিৎসক সুভাষ। বিধানসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহল এলাকায় বিজেপি যতটা ভাল ফল করবে বলে দল আশা করেছিল ততটা হয়নি। ঝাড়গ্রাম লোকসভা এলাকায় একটি আসনেও জয় মেলেনি। দিলীপের মেদিনীপুরেও জয় শুধু খড়্গপুর সদরে। তবে তুলনামূলক ভাবে ভাল ফল হয় পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলায়। ওই দুই জেলার তিন লোকসভা আসনের মোট ২১ আসনের মধ্যে ২০টিতেই লোকসভা ভোটের নিরিখে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু এ বার সেই জয় কমে হয়ে যায় ১৪। সুভাষের এলাকায় সাতটিতে এগিয়ে থাকলেও জয় মেলে চারটিতে। তবে পাশের লোকসভা বিষ্ণুপুরও ছিল তাঁরই দায়িত্ব। সেখানে সাতের মধ্যে পাঁচটিতে জয় পায় বিজেপি। রাজ্য বিজেপি-র একাংশ মনে করছে, তারই পুরস্কার পেলেন সুভাষ।
তবে রাজ্য বিজেপি নেতাদের অনেকের বক্তব্য, এ ছাড়া আরও একটি অঙ্ক রয়েছে সুভাষকে মন্ত্রিসভায় নেওয়ার পিছনে। যুবক বয়স থেকেই আরএসএস-এর স্বয়ংসেবক সুভাষ নতুন মন্ত্রিসভায় বাংলার একমাত্র সঙ্ঘ প্রতিনিধি। এত দিন যে জায়গাটায় ছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রীকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সঙ্ঘ শিবির যাতে ‘ক্ষুন্ন’ না হয়, সেটাও সম্ভবত মাথায় রেখেছেন মোদী-শাহরা। সে কারণেও সুভাষকে মন্ত্রিত্বে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকের অনুমান। তবে এই যুক্তি-দেওয়া রাজ্য বিজেপি-র নেতারা এটাও মানছেন যে, সুভাষের এই গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল। চিরকাল মুখ বুজে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন তিনি। কখনও কোনও বিতর্কে জড়াননি। বরাবর দলের শৃঙ্খলা মেনে চলা সুভাষকে সেই কারণেই সম্প্রতি রাজ্যে বিজেপি-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব দিয়ে তাঁর অবস্থান আরও মজবুত করলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পাশাপাশিই, দলের অন্দরেও বার্তা দিলেন।