রাজীবকে কেন হেফাজতে নিতে চায় সিবিআই

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সারদা তদন্তে রাজ্য সরকার গঠিত সিট-এর কাজ সে ভাবে দেখাশোনা করতেন না বলে রাজীব কুমার সিবিআইয়ের সামনে দাবি করেছিলেন।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৬
Share:

রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই ঘুরে যাওয়ার পরে ডিসি সাউথের অফিসের সামনে সাদা পোশাকে পুলিশকর্মীদের ভিড়। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রশ্নে অনড় সিবিআই। তাঁর মতো সিনিয়র আইপিএস অফিসারকে কেন হেফাজতে নিতেই হবে, তা নিয়ে বিতর্ক রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, গত ২২ মাস ধরে রাজীব সারদা তদন্তে টানা ‘অসহযোগিতা’ করে গিয়েছেন। ফলে এখন প্রয়োজন হলে তাঁকে হেফাজতে না নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, সারদা তদন্তে রাজ্য সরকার গঠিত সিট-এর কাজ সে ভাবে দেখাশোনা করতেন না বলে রাজীব কুমার সিবিআইয়ের সামনে দাবি করেছিলেন। মূলত তদন্তের পরিকাঠামো গত সহায়তা (লজিস্টিকস) দেখতেন বলে তিনি সিবিআইকে জানান। যদিও শঙ্কর ভট্টাচার্য, দিলীপ হাজরা, অর্ণব ঘোষ, পল্লবকান্তি ঘোষেদের মতো পুলিশ আধিকারিকেরা সিবিআইকে জানান, রাজীব কুমারের নির্দেশেই তাঁরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সিবিআই প্রশ্ন তুলেছে, যদি শুধু পরিকাঠামোয় সাহায্যই দিতেন, তা হলে সুপ্রিম কোর্টে সারদার শুনানির সময় তিনি হাজির থাকতেন কেন? কেনই বা সারদা মামলার আইনজীবী পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল?

সিবিআইয়ের বক্তব্য, দেবযানী মুখোপাধ্যায় সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’কে দেওয়া বয়ানে জানিয়েছিলেন, সারদার নগদের হিসাব একটি ডায়েরিতে লেখা থাকত এবং তা বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অফিসারদের তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাতেই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম এবং নগদের হিসাব ছিল বলে দাবি। রাজীব বার বার সেই ডায়েরির কথা অস্বীকার করে গিয়েছেন। যদিও সারদা তদন্তে প্রভাবশালীদের খুঁজতে ডায়েরিটি ‘অতীব’ জরুরি বলে সিবিআই মনে করছে। আবার ‘সিট’ সারদা তদন্ত শুরু করার পর অভিযুক্তদের কল ডেটা রেকর্ড সংগ্রহ করেছিল বিধাননগর পুলিশ। কিন্তু সিবিআইকে মাত্র ৪-৫টি কলের বিস্তারিত দেওয়া হয়েছিল। পরে সংশ্লিষ্ট টেলিফোন সংস্থা সিবিআইকে আরও ১২টি ফোন নম্বরের বিস্তারিত জানায়।

Advertisement

তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের বয়ান।

সিবিআইয়ের দাবি, রাজীব কুমারের ‘সিট’ সারদা তদন্তের দায়িত্বে ছিল এক বছরের বেশি। কিন্তু সারদার অর্থের আসল ‘উপভোক্তাদের’ ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি তিনি। কার নির্দেশে বা কেন তিনি তা করেননি, সেই প্রশ্নের জবাবও এড়িয়ে গিয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। সারদা মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায় ইডি ও সিবিআইয়ে দাবি করেছিলেন, মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে রাজীব কুমারের সামনে ল্যাপটপে সমস্ত নথির সূচিপত্র তৈরি হয়েছিল। পর সেই সব নথি বিধাননগর পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। সিবিআই বার বার চেয়েও তা পায়নি। কেন? এ ছাড়া সুদীপ্ত সেন, দেবযানী, কুণাল ঘোষেদের জেরার ভিডিয়ো রেকর্ডিংও সিবিআইকে দেয়নি ‘সিট’। তদন্তকারীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিলংয়ে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব হলেও নানা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। বহু প্রশ্নের জবাব দেননি। সে কারণেই রাজীবকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।

অনেকেরই প্রশ্ন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা পঙ্কজ শ্রীবাস্তবের বাড়ি পর্যন্ত ঘেরাও করে নিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। এক সাব-ইন্সপেক্টরকে দিয়ে সিবিআইয়ে স্পেশ্যাল ডিরেক্টরকে সমন পাঠান রাজীব। বর্তমান পরিস্থিতি কি সেই সংঘাতের আবহে তৈরি হয়েছে? রাজীবের যখন কোথাও পালানোর সম্ভাবনা নেই, তখন হেফাজতে নেওয়ার জন্য জোরাজুরি কেন?

এক শীর্ষ সিবিআই কর্তার বক্তব্য, ‘‘কোনও ব্যক্তি যদি জানেন, তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না, তা হলে তিনি তদন্তকারীদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সেই কারণেই তদন্তকারীদের হাতে সাক্ষী বা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার অধিকার দেওয়া আছে। রাজীব দুঁদে পুলিশ অফিসার। তিনি জানেন, কী ভাবে তদন্ত এড়িয়ে যেতে হয়। তিনি সিবিআইকে সারদা মামলার নথিপত্র দিলে, তদন্তে সহযোগিতা করলে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। নইলে আইন মানতে হবে।’’

এ প্রসঙ্গে সিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, সাড়ে সতেরো মাস পর আদালতের রক্ষাকবচ যে দিনই উঠে গিয়েছে, সে দিনই গ্রেফতার করা হয়েছে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন না তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement