শান্তির বারি । ছবি: পিটিআই
আষাঢ়ের প্রথম দিন পেরিয়েছে। মেঘের দেখাও মিলেছে। তবে একটু ঝিলিক দিয়েই পালিয়ে যাচ্ছে সে। সকাল থেকেই আকাশে কালো রঙের মেঘের ঘোরাফেরা। কিন্তু গরম কমেনি একটুও। এমনকী, ইলশেগুঁড়িতে সাময়িক স্বস্তির বদলে নাজেহাল অবস্থা। মানুষজন ঘামছেন দরদর করে। আবার আর্দ্রতা কমা-বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাম উধাও। সবমিলিয়ে ‘প্রখর দারুণ অতি দীর্ঘ দগ্ধ দিন’ কাটাতে কাটাতে নাজেহাল বঙ্গবাসী। ৪০ ডিগ্রি গরমেই জামাই বাবাজীবনের খাতিরদারিও ভালভাবে করা যায়নি জামাইষষ্ঠীতে।
অন্য বছরের মতোই ভ্যাপসা গরমে তিতিবিরক্ত মহানগর কলকাতা। তবে সাতসকালেই প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে ঘামে ভিজে যাচ্ছে শরীর। এমনটা তো অন্য বছর হয়না। নিত্যযাত্রীদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ভিড়ে ঠাসা বাস কিংবা ট্রেনে। কচিকাঁচাদের অবস্থা তো আরও মারাত্মক। এই প্রসঙ্গে দিল্লির এইমস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লবী ঠাকুর বলেন, ‘‘শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের মতো নয়। তাই বারবার ভেজা কাপড়ে গা মোছানোর পাশাপাশি তাদের পোশাকের দিকেও নজর দিতে হবে এই গরমে । সুতির হালকা পোশাক পরানোই ভাল। খাওয়াতে হবে প্রচুর জল ও গ্লুকোজ।’’ বয়স্কদের জন্যও প্রযোজ্য একই নিয়মাবলী।
বঙ্গোপসাগরে জলীয় বাষ্প জমা হলেও বর্ষা কোথায়? উষ্ণতার চৌকাঠ পেরিয়ে মুষলধারে বৃষ্টি নামার কোনও চিহ্ন নেই। কিন্তু গ্রীষ্মের প্রখর তাপ তো নতুন নয়। মাত্র ৪০ ডিগ্রিতেই চলতি বছরে এরকম ভয়ানক অবস্থা কেন? এর উত্তর কিন্তু একটাই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’। এমনটাই বললেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক-বিজ্ঞানী সুব্রত কুমার মিদ্যা।
অধ্যাপক মিদ্যার কথায়, ‘‘গত ১৫০ বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ০.৮৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বিশ্বের সর্বত্রই বেড়েছে গরম। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়। ধীরে ধীরে ‘হিট এজ’-এর দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা। আর তাই এবছর এরকম হাঁসফাঁস অবস্থা।’’
‘হিট এজ’ কী জানতে চাইলে আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘৩০ লক্ষ বছর আগে প্রায় হঠাৎ করেই পৃথিবীতে একটা পর্যায়ক্রমিক শৈত্যযুগ ও অন্তর্বর্তীকালীন উষ্ণ যুগের সূত্রপাত হয়। কেন এইভাবে শৈত্য ও উষ্ণ যুগ (হিট-এজ) চক্রের আবির্ভাব হল তাই নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ আছে, তবে পৃথিবীর মহাদেশগুলোর পারস্পরিক অবস্থান, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর কক্ষপথ ও পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস এর জন্যে দায়ী।’’
বিশ্ব উষ্ণায়ন অর্থাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণেই ধীরে ধীরে সেই উষ্ণ ষুগের দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী। কারণ বাড়ছে দূষণের মাত্রা। ওজোন স্তরের ছিদ্রের আয়তন বাড়ছে। সরাসরি পৃথিবীতে এসে পড়ছে অতিবেগুনি রশ্মি। বাড়ছে সমু্দ্রের জলস্তর। উপকূলবর্তী এলাকা সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। আর এই সবকিছুই দায়ী হাঁসফাঁস গরমের জন্য।
গরমে ভরসা পাখায়। ছবি : পিটিআই
অধ্যাপক মিদ্যা বলেন, ‘‘শহরাঞ্চলে কংক্রিটের তৈরি আকাশছোঁয়া আবাসন। আর গরম হাওয়া তৈরি করেছে ‘হিট আইল্যান্ড’। উষ্ণ হাওয়া হালকা হয়ে উপরে উঠে গেলে জলীয় বাষ্পের সেই শূন্যস্থান পূরণ করার কথা। বৃষ্টি হওয়ারও কথা। তবুও এবছরে বৃষ্টি হচ্ছে না কেন? বৃষ্টি না হওয়ার একমাত্র কারণ ‘ক্লাউড কনডেনসেশন নিউক্লি’ নামে একধরনের সূক্ষ্ম কণা বা মেঘের বীজ। এই সূক্ষ্ম কণাগুলিতে জলকণা জমতে জমতেই বৃষ্টির সূত্রপাত ঘটে। তবে মারাত্মক উষ্ণতার কারণেই সূক্ষ্ণ কণাগুলির আয়তনের হেরফের ঘটছে। আটকে রয়েছে বৃষ্টি।’’
আরও খবর: ‘মানু নয়, আমাকে বলো মিস্টার প্রেসিডেন্ট’, পড়ুয়াকে ধমক মাকরঁর
শহরাঞ্চলের দু’-একটি জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও গত ৩০ বছরে মফস্বলগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাই বলছে সে কথা। এর কারণ হিসাবে সুব্রতবাবু বলেন, অ্যানথ্রোপোজেনিক হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ শহরাঞ্চলে অনেকটাই বেশি। কারখানা ও গাড়ি থেকে দূষণের ফলে এই অ্যানথ্রোপোজেনিক হাইড্রোকার্বন নিঃসৃত হয়। শহরের ‘হিট আইল্যান্ড’-এ জলীয় বাষ্পের সঙ্গে অ্যানথ্রোপোজেনিক হাইড্রোকার্বনের সংযোগে বৃষ্টি হলেও মফস্বলে তা হচ্ছে না। তাই কমেছে বৃষ্টি।
মার্কিন সেনার নতুন শাখা, মহাকাশ বাহিনী গড়ছেন ট্রাম্প
সবমিলে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নানা প্রোটোকল তৈরি হলেও তা সঠিকভাবে পালন না করায় দাবদাহ কমছে না। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেও রাস্তাঘাট সম্পূর্ণ শুকনো খটখটে। আকাশ বাদল মেঘে ছেয়ে যাক, বর্ষা নামুক এটাই চাইছেন বঙ্গবাসী।