২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে রায় ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এই সংক্রান্ত মামলায় এর আগে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল, সেই রায় অনেকাংশেই বহাল রেখেছে দেশের শীর্ষ আদালত। হাই কোর্টের রায়ে সামান্য কিছু বদল আনা হয়েছে মাত্র। এই প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারার মধ্যে এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁদের এত দিনের বেতনও ফেরত দিতে হবে। তাঁরা কারা, রায়ে তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ৪১ পৃষ্ঠার রায়ের প্রতিলিপি পড়ে তার হদিস পেতে চেষ্টা করল আনন্দবাজার ডট কম।
বেতন ফেরত দিতে হবে কাদের?
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, ২০১৬ সালের নিয়োগপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রশ্নাতীত ভাবে যাঁরা ‘অযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত’ বা ‘দাগী’ (টেন্টেড), তাঁদের চাকরি বাতিলের সঙ্গে বেতনও ফেরত দিতে হবে। তাঁদের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রায় সম্পূর্ণ বহাল থাকছে। এই ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার।
কী ভাবে ‘অযোগ্য’ চিহ্নিতকরণ?
বেতন ফেরত দিতে হবে না কাদের?
২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার অন্যতম প্রধান জটিলতা ছিল ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’ বাছাই। আদালত জানিয়েছে, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যে কারচুপি হয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু উদ্ধার করা যায়নি উত্তরপত্র বা ওএমআর শিট। তার ফলে অধিকাংশ ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’ প্রার্থীকে চিহ্নিতই করা যায়নি। যে কারণে সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করতে হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, যাঁদের চিহ্নিত করা যায়নি, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তাঁদের চাকরি বাতিল হবে। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ‘‘অবৈধতার জন্য সমগ্র নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত যথার্থ। এই নিয়োগ ভারতীয় সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদের বিরোধী। যে প্রার্থীদের অযোগ্য বলে চিহ্নিত করা যায়নি, তাঁদের নিয়োগ বাতিল হবে। কিন্তু তাঁদের কোনও বেতন ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’’
রায়ে আর কী বলা হল?
মূল মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘আদালত বলেছে, চিহ্নিত অযোগ্যদের বেতন ফেরত দিতে হবে। নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। যাদের চাকরি গেল, তারা তাতে যোগ দেবে এবং বয়সের ক্ষেত্রে ছাড় পাবে। অর্থাৎ, হাই কোর্টের রায় বহাল থাকল। যোগ্য-অযোগ্যদের চিহ্নিত করা যায়নি। আদালত তো চিহ্নিত করতেই চেয়েছিল। বার বার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের বিষয়ে নানা রকমের তথ্য এসেছে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হল।’’
ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে লেখা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। কিন্তু এই তিন মাসের সময়সীমা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদালতের রায়ের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, চাকরিহারা যে প্রার্থীরা আগে কোনও সরকারি দফতরে বা সরকার পোষিত দফতরে চাকরি করতেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।