অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অধীররঞ্জন চৌধুরীকে সরানো হলে নতুন সভাপতি হিসেবে কংগ্রেস হাই কমান্ডের বাছাই তালিকায় আপাতত চারটি নাম উঠে এসেছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এই সপ্তাহেই কংগ্রেস হাই কমান্ডের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। রাহুল গান্ধীর মণিপুর সফরের জেরে সেই বৈঠক পিছিয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত ফের বৈঠক ডেকে রাজ্যের নেতাদের মতামত জানতে চাওয়া হবে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, অধীরের বিকল্প হিসেবে আপাতত যে চার জনের নাম উঠে এসেছে, তাঁরা হলেন— এক, নেপাল মাহাতো। এআইসিসি সূত্রের খবর, নেপালের প্রতি অধীরের সমর্থন রয়েছে। দুই, উত্তরবঙ্গের নেতা শঙ্কর মালাকার। তিন, এআইসিসি-র প্রাক্তন সম্পাদক শুভঙ্কর সরকার এবং চার, আবদুস সাত্তার। তিনি বাম আমলের মন্ত্রী। সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে এসেছেন। এআইসিসি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীরের কাছে তরুণ নেতাদের অনেকেই শেষের দু’জনের মধ্যে একজনকে প্রদেশ সভাপতি করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ তাঁরা নতুন প্রজন্মের নেতা।
এই চার জনের পাশাপাশি দীপা দাশমুন্সির নামও এআইসিসি-র পছন্দের তালিকায় রয়েছে। তবে তিনি রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে কংগ্রেস হাই কমান্ডের সংশয় রয়েছে। কারণ এ চেল্লাকুমার পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক থাকাকালীন তাঁকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি রাজি হননি। তবে অন্যান্য রাজ্যের নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্বে দীপাকে দেখা গিয়েছে। তিনি এখন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেরল, তেলঙ্গানা, লক্ষদ্বীপের দায়িত্বে।
প্রদেশ কংগ্রেসের একাধিক নেতা এআইসিসি-র পর্যবেক্ষকদের কাছে প্রস্তাব দেন, মহারাষ্ট্রে যেমন গোটা রাজ্যের জন্য একটি এবং শুধু মুম্বইয়ের জন্য আর একটি কংগ্রেস কমিটি রয়েছে, প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গেও তেমন দু’টি কমিটি হোক।
কারণ হিসেবে দলের একাংশের যুক্তি, বাংলায় কংগ্রেসের যে কয়েক জন পরিচিত নেতা জেলায় আছেন, তাঁরা প্রায় কেউই কলকাতা বা শহরকেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। নির্দিষ্ট কয়েকটা জেলার উপরে নির্ভর করে দল চালাতে গেলে সংগঠনের ভাল তো হয়ই না, বরং সেই ‘পকেটে’ও ক্ষয় ধরে। যা এখন বাংলায় হয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্যের সদর এলাকা এবং বাকি রাজ্যের জন্য দু’টি আলাদা কমিটি করে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। এমন প্রস্তাবের কোনও কিছুই অবশ্য চূড়ান্ত নয়।
লোকসভা ভোটে অধীর চৌধুরী নিজেই বহরমপুর থেকে হেরে যাওয়ায় তিনি আর প্রদেশ সভাপতি থাকবেন না বলে জল্পনা চলছিলই। এর মধ্যেই অধীর বলেছেন, নিজে ইস্তফা না দিলেও তিনি অস্থায়ী সভাপতি। কারণ এমনিতেই নতুন প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি গঠন বকেয়া রয়েছে। তিনি কোনও পদের জন্য লালায়িত নন বলেও অধীর জানিয়ে দিয়েছেন।
নেতা বদলের চেয়েও অবশ্য দলের অবস্থান নিয়ে বেশি চিন্তিত রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘সভাপতি কে হবেন বা কমিটি কী হবে, তা এআইসিসি-ই ঠিক করবে। কিন্তু সভাপতি যাকেই করা হোক, বাংলায় যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসপর্মণ করে চলতে বলা হয়, তা হলে দলটা যেটুকু আছে, সেই অস্তিত্বও বিপন্ন হবে!’’