Adhir Chowdhury

প্রদেশ কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতি কে? অধীর আগ্রহ সিপিএমে, নজর রাখছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল

লোকসভা ভোটে তৃণমূল এ বার বড় জয় পেয়েছে ঠিকই। তবে শাসকদল পর্যালোচনা করে দেখেছে, কয়েকটি জায়গায় সংখ্যালঘু ভোটে কংগ্রেসের আধিপত্য রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৪ ১০:১৭
Share:

(বাঁ দিক থেকে) মল্লিকার্জুন খড়্গে, অধীর চৌধুরী এবং রাহুল গান্ধী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সোমবার প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতারা। সেখানে তাঁরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভোটের পরেই অধীর চৌধুরী প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি কে হবেন, সে ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বাংলার সিপিএম। এমনকি, শাসকদল তৃণমূলও নজর রাখছে গোটা বিষয়টির উপর।

Advertisement

অধীর যদি প্রদেশ সভাপতি পদে না থাকেন, তার বদলে অন্য কেউ সভাপতি হলে তৃণমূল বিরোধিতার প্রশ্নে নতুন প্রদেশ সভাপতির কী অবস্থান হবে, তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্য সিপিএমের নেতৃত্ব। আবার সর্বভারতীয় স্তরে অনেক ক্ষেত্রে কংগ্রেস-তৃণমূলের বোঝাপড়া দেখা যাচ্ছে। সংসদে কক্ষ সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও আপাতদৃষ্টিতে ঐক্যের ছবিই ধরা পড়ছে। তা ছাড়া মালদহ, উত্তর দিনাজপুর জেলা এবং মুর্শিদাবাদের কিয়দংশে সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণের নিরিখে কংগ্রেস এখনও গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বলে মনে করছেন তৃণমূলের প্রথম সারির একাংশ। সেই প্রেক্ষাপটে অধীরের বদলে অন্য কেউ দায়িত্ব নিলে রাজ্যে দুই দলের সমীকরণে বদল আসতে পারে বলে অভিমত শাসকদলের অনেকের।

অধীরের বদলে যিনিই সভাপতি হোন, তিনি তৃণমূল-বিরোধিতার রাজনীতিতে কতটা ‘আগ্রাসী’ হবেন, সে বিষয়ে সিপিএমের নেতাদের বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। প্রকাশ্যে অবশ্য সে বিষয়ে তাঁরা মন্তব্য এড়িয়েই যাচ্ছেন। যেমন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কংগ্রেস জাতীয় দল। সর্বভারতীয় স্তরে যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের ভূমিকা আছে, তেমনই বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই চালিয়ে যাওয়া জরুরি। আশা করব রাজ্যে কংগ্রেস সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’’ তবে একান্ত আলোচনায় সিপিএমের এক তরুণ নেতা বলছেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোট বাদ দিলে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমাদের পার্টি এবং বামফ্রন্টের ভোট কত আমরা নিজেরাই জানি না। কারণ, সব ভোটেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে ভোটে লড়েছি। ২০২১ সালে আবার আইএসএফ সঙ্গে ছিল। এখন রাজ্যে কংগ্রেস যদি বামেদের হাত ছেড়ে তৃণমূলের কাছাকাছি যায়, তা হলে ফের নতুন করে ভোটের কৌশল করতে হবে।’’

Advertisement

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের বেশ কয়েক মাস আগে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। যার সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল গত বছর অগস্ট মাসে। যে দিন কাকভোরে দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অধীর চৌধুরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের ‘জঙ্গি’ বিরোধিতা জারি রাখায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। তৃণমূল সেই সময়ে প্রকাশ্যেই বলেছিল, অধীরের জন্যই বাংলায় বোঝাপড়া হল না!

লোকসভা ভোটে তৃণমূল এ বার বড় জয় পেয়েছে ঠিকই। তবে শাসকদল পর্যালোচনা করে দেখেছে, কয়েকটি জায়গায় সংখ্যালঘু ভোটে কংগ্রেসের আধিপত্য রয়েছে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘লোকসভায় যদি কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া হলে মালদহ উত্তর এবং রায়গঞ্জ আসন বিজেপি জিততে পারত না।’’ তাঁর বক্তব্য, বিধানসভা ওয়াড়ি দেখলে এই সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৪৫-৫০টি। যা ‘উল্লেখযোগ্য’ সংখ্যা। এ কথা ঠিক যে, জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপালের মতো দিল্লি কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই চান বাংলায় তাঁদের দল চলুক মমতার সঙ্গে সমন্বয় রেখে। কিন্তু অধীরকে এড়িয়ে হাইকমান্ড তা বলবৎ করতে পারেনি। অধীরও নিজের লাইনে অনড় থেকেছেন এবং কখনও কখনও সংঘাতেও গিয়েছেন। ফলে তাঁর বদলে যদি অন্য কেউ প্রদেশ সভাপতি হন, তিনি কতটা সেই কাজ করতে পারবেন, সেই প্রশ্ন কংগ্রেসের অনেকের মধ্যেও রয়েছে। তবে পরবর্তী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে কংগ্রেসে যতটা না আগ্রহ, তার চেয়ে বেশি আগ্রহ সিপিএমের মধ্যে। সিপিএমের মতো ‘সঙ্কটে’ না ভুগলেও তৃণমূলও বিষয়টির উপর নজর রাখছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement