ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড।—ছবি সংগৃহীত।
রাতের অন্ধকারে খোদ জেলাশাসকের বাংলো লক্ষ্য করেই বোমা ছুড়ল কে বা কারা! ঘটনাস্থল সেই বীরভূম, যে জেলার রাজনৈতিক ইতিহাস বোমাবাজি ও বিস্ফোরণ ছাড়া অসম্পূর্ণ। তবে সোমবার গভীর রাতে যা ঘটল, তা এক কথায় নজিরবিহীন—বলছেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।
সম্প্রতি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে বীরভূমের লাভপুর, মল্লারপুর। জেলা জুড়ে মিলেছে শয়ে শয়ে বোমা। প্রশ্ন উঠেছে, কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঘেরা জেলা প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যদি সুরক্ষিত না থাকেন, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়। এ দিন সকালেই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড। বিকেলে আসে পুলিশ কুকুরও। জেলা পুলিশের ডিএসপি-র নেতৃত্বে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করা হয়েছে ঘটনার তদন্তে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়েছেন, সোমবার গভীর রাতে তিনি কিছু ফাটার আওয়াজ শুনেছিলেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘কারা এই ঘটনায় জড়িত আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
সোমবার রাতেই গভীর রাতেই বোমাবাজি হয়েছে সিউড়ি শহরে, এবিপি আনন্দের সাংবাদিক গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি লক্ষ্য করেও। পুলিশ কুকুরও এ দিন ডিএম বাংলোর বাইরে বারুদের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে গোপালের বাড়ি পর্যন্ত যায়। তার পরে বাঁশজোড় এলাকার দিকে কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়।
সিউড়ি শহর লাগোয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষেই রয়েছে জেলাশাসকের বাংলো। পুলিশ সূত্রের খবর, রাত আড়াইটে নাগাদ ওই বাংলো লক্ষ্য করে বোমাবাজি করে দুষ্কৃতীরা। জাতীয় সড়ক থেকে বাংলোয় যাওয়ার রাস্তা ও সংলগ্ন এলাকায় ৭টি বোমা ফেটেছে।
কেন জেলাশাসকের বাংলো লক্ষ্য করে বোমাবাজি হবে? পুলিশ-প্রশাসনের একটা সূত্র মনে করছে, বালি মাফিয়ারা এর পিছনে থাকতে পারে। কারণ, সম্প্রতি অবৈধ ভাবে বালি মজুত নিয়ে জেলাশাসকের কড়া অবস্থান নিয়েছেন। বর্ষাকালে বালি মজুতের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা মানেননি, এই অভিযোগে বীরভূমের অধিকাংশ লিজ হোল্ডার বা লেসিদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলাও করেছে প্রশাসন। গ্রেফতারি এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বালি কারবারিরা। বৈধ বা অবৈধ ভাবে ব্যবসা চালাতে সমাজবিরোধীদের মদত দেন বালি কারবারিরা, এই অভিযোগ বীরভূমে নতুন নয়। বালিঘাটের দখলকে ঘিরে বোমাবাজি ও প্রাণহানিও দেখেছেন জেলার মানুষ।